চট্টগ্রাম নগরীতে টানা বৃষ্টির ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার্থীরা। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতাকে উপেক্ষা করে নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে তাদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। অনেকে হাঁটু পানি মাড়িয়ে আধাভেজা হয়ে পৌঁছেন কেন্দ্রে।
চট্টগ্রামে বেশ কদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। তবে রোববার (৩০ জুন) ভোর থেকে শুরু হয় হালকা থেকে মাঝারি টানা বৃষ্টি। সকাল ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।
বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে যথাসময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানো নিয়েও শঙ্কায় পড়েন পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা। এমনকি বৃষ্টির ভোগান্তি মাথায় গাড়ি না পেয়ে কেউ কেউ হেটে আবার কাউকে তিনগুণ অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া দিয়ে কেন্দ্রে যেতে হয়। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার আধাঘণ্টা পরেও নগরের কয়েকটি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীরা পৌঁছেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে অবশ্যই পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর নির্দেশনা দেওয়া ছিল শিক্ষা বোর্ডের। কিন্তু মৌসুমি ভারী বৃষ্টির কারণে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে পরীক্ষার্থীদের দেরি হয়। বৃষ্টিতে কোথাও জলজট কোথাও যানজট আবার কোথাও বা গাড়ি না পেয়ে মহাদুর্ভোগে পড়েছেন এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা।
নগরের বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা লুৎফুর রহমান তার মেয়ে আদিবাকে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে এসেছেন পরীক্ষা শুরু হওয়ার শেষ মুহূর্তে।
জানতে চাইলে লুৎফুর রহমান বলেন, 'ভোর থেকে যে বৃষ্টি শুরু হলো থামার নাম নাই। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বের হয়ে গাড়ি পাচ্ছি না। প্রায় আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ভেজার পর বহুকষ্টে একটা সিএনজিতে করে রওনা হই। এজন্য কেন্দ্রে আসতে দেরি হয়েছে। এখানে এসে দেখছি আমার মেয়ের মত আরও অনেকেরই লেট হচ্ছে। বৃষ্টি আর যানজটের কারণেই আসলে এমনটা হয়েছে।'
এছাড়া বৃষ্টিতে নগরের নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি পড়েন পরীক্ষার্থীরা।
আন্দরকিল্লা এলাকায় এলাকায় মেয়েকে নিয়ে কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য গাড়ির অপেক্ষা দাঁড়িয়ে আছেন মো. জহির উদ্দিন নামে এক অভিভাবক। তিনি বলেন, 'সকালে ঘুম থেকে উঠার পর বৃষ্টি দেখে ভয় পাচ্ছিলাম বাচ্চাকে কিভাবে পরীক্ষা কেন্দ্র দিয়ে আসব! বৃষ্টি না থাকলে বাচ্চা নিজে যেতে পারত। এখন যে বৃষ্টি আর রাস্তাঘাটের কথা আর নাই বলি। এই বৃষ্টিতে ঠিকঠাক মতো গাড়িও পাওয়া যায় না। তার উপর দ্বিগুণ তিন গুন ভাড়া চায়। এখন যেহেতু বিপদে পড়ছি বাধ্য হয়ে যেতে হবে।'
এদিক আগ্রাবাদ থেকে ছেলে চট্টগ্রাম কলেজ কেন্দ্রে নিয়ে আসা অভিভাবক হোসনে আরা বলেন, 'অনেক কষ্ট করে বাচ্চাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাই দিলাম। আসার সময় দেখছিলাম অনেকে পরীক্ষার্থী গাড়ির অপেক্ষায় আছে। কি যে হবে তাদের!'
সবকেন্দ্রে যথাসময়ে পরীক্ষা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী সকল কেন্দ্রে যথাসময়ে পরীক্ষা শুরু হয়েছে।'
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে রোববার (৩০ জুন) সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা। বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্রের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে ১১ আগস্ট।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবার ২৩৮টি কলেজের এক লাখ ৬ হাজার ৩৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। মহানগরসহ জেলার মোট পরীক্ষার্থী সংখ্যা ৭৬ হাজার ১৭৯ জন, যার মধ্যে ৩৪ হাজার ৯৭৯ জন ছাত্র আর ৪১ হাজার ২০০ জন ছাত্রী।
শুধু মহানগরে পরীক্ষার্থী ৩৭ হাজার ৪৯২ জন, যার মধ্যে ছাত্র ১৮ হাজার ১৩৬ জন এবং ছাত্রী ১৯ হাজার ৩৫৬ জন।
এছাড়া কক্সবাজার জেলায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ হাজার ৪৬৩ জন, যার মধ্যে ছাত্র পাঁচ হাজার ৫৭৪ এবং ছাত্রী সাত হাজার ৮৮৯ জন।
রাঙামাটিতে পাঁচ হাজার ৬৬৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র দুই হাজার ৬৬২ জন এবং ছাত্রী তিন হাজার একজন। খাগড়াছড়িতে ছয় হাজার ৭২৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র তিন হাজার ১৬২ ও ছাত্রী তিন হাজার ৫৬৫ জন।
বান্দরবান জেলায় চার হাজার দুইজন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র এক হাজার ৯৫৫ জন এবং ছাত্রী দুই হাজার ৪৭ জন।
মোট পরীক্ষাকেন্দ্র ১১৫টি। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৬৯টি, কক্সবাজারে ১৮টি, রাঙামাটিতে ১০টি, খাগড়াছড়িতে ১০টি ও বান্দরবানে ৮টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হচ্ছে।
পরীক্ষা শুরু আগে শিক্ষা বোর্ড সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথ জানিয়েছেন, 'এখনও পর্যন্ত কোনও কেন্দ্র থেকে অভিযোগ পাইনি। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কোনও পরীক্ষার্থী ৫ মিনিট দেরিতে পরীক্ষা কেন্দ্রে এলে, তাকে আরও ৫ মিনিট বেশি সময় দেওয়া হবে।'
এদিকে আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, শনিবার রাত ১২টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত নগরে ৫৮ দশমিক ৬ মিলিমিটার এবং রোববার (৩০ জুন) সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আলী আকবর খান বলেন, 'বাংলাদেশের উপর মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে গত তিনদিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। আস্তে আস্তে বৃষ্টিপাত কমতে থাকবে। তবে যেহেতু এখনো তিন নম্বর সিগন্যাল আছে তাই ভারী বৃষ্টি হলেই এ সময় কোথাও কোথাও পাহাড় ধসেরও ঝুঁকি রয়েছে।'