চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘পলো বাওয়া উৎসব’ পালিত হয়েছে সিলেটের বিশ্বনাথে।
রোববার (২৭ জানুয়ারি) ঝপ ঝপ শব্দের তালে তালে উৎসবে মেতেছিলো উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের দক্ষিণের (বড়) বিলবাঁশ আর বেতের সমন্বয়ে তৈরি করা পলো ও উড়াল-চিটকি-ঠেলা জাল দিয়ে শীত উপেক্ষা করে এক সাথে মাছ শিকার করাই গ্রামবাসীর প্রধান এক আনন্দের উৎসব। এই দিনটিকে ঘিরে গ্রামে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
সকাল ৮টা থেকে সৌখিন মানুষ বিলের পারে এসে জমায়েত হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিলের পারে লোকসমাগম বাড়তে থাকে।
সকাল সাড়ে ১১টায় হৈ হৈ করে একসাথে পলো-জাল হাতে মাছ শিকারে নেমে পড়েন সবাই। ঝপ ঝপ শব্দের তালে তালে চলতে থাকে পলো বাওয়া। দুপুর পর্যন্ত ‘পলো বাওয়া উৎসবে’ অংশ নেন গোয়াহরি গ্রামের সব বয়সী পুরুষ।
গ্রামে বয়োবৃদ্ধ বাসিন্দা আব্দুল হাসিম বলেন, গ্রামের রীতি অনুযায়ী প্রতি ঘর থেকে একজন পুরুষ পলো নিয়ে উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। যাদের পরিবারে পুরুষ সদস্য বাড়িতে নেই, তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে কোন আত্মীয় মাছ শিকারে অংশগ্রহণ করেন। এবারও সেই নিয়মে পলো বাওয়া উৎসব উদযাপিত হয়।
এবছর বিলে অধিক পানি ও কচুরিপানা থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় মাছের সংখ্যা কম বলে জানিয়েছেন শিকারিরা। তাই অনেককেই খালি হাতে ফিরতে হয় ঘরে।
শিকারিদের ওই আনন্দের সাথে সাথে তাল মেলান বিলের তীরে অপেক্ষমাণ গ্রামের মুরব্বী, মহিলা ও শিশুরা। দূর থেকে আসা অনেকের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বিলের পাড়ে।
গ্রামের প্রবীণ মুরব্বী হাজী আব্দুল আহাদ বলেন, পলো বাওয়া উৎসব আমাদের গ্রামের একটি ঐতিহ্য। আমাদের গ্রামবাসী পূর্বপুরুষের আমল থেকে এই উৎসব পালন করে আসছেন। বয়সের কারণে এখন আর পলো বাওয়াতে অংশগ্রহণ করতে পারি না। তবে জীবনে ওই বিলে প্রচুর পরিমাণ মাছ শিকার করেছি।
অন্যদিকে পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নিতে গ্রামের অনেক প্রবাসীও দেশে আসেন। তেমনি যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল মছব্বির, আব্দুল আওয়াল, ক্বারী আবুল হোসেন, সাদিক হোসাইন ও কানাডা প্রবাসী ফয়সল আহমদও এবার দেশে আসেন।
তারা জানান, পলো দিয়ে মাছ শিকার তাদের কাছে একটি মজার বিষয়। তাই এবার অংশগ্রহণ করতে পারায় তারা আনন্দিত।