তিস্তার পানি কমলেও বেড়েছে ভাঙন, বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লালমনিরহাট | 2024-07-08 18:50:07

লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি কমলেও বেড়েছে ভয়াবহ নদী ভাঙন। ভাঙনের দিশাহারা হয়ে পড়ছে তিস্তা পাড়ের হাজারো মানুষ। ইতিমধ্যে নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় দুই শত পরিবারের ঘরবাড়ি। জেলার ৫ উপজেলার গ্রামের ৬৫ টি বসতভিটা ও বিভিন্ন স্থাপন তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে বিদ্যালয়, মসজিদ ও মাদ্রাসা।

সোমবার (৮ জুলাই ) বিকেল ৩টায় তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। ফলে তিস্তার পানি কমতে শুরু করছে।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র ও চরবাসী জানান, ভারতে সিকিমে উৎপত্তি স্থল থেকে ভারতে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। নদীর বাংলাদেশ অংশের উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তা পানি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ফারাক্কা গেট খুলে বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেয়া হয়। একই ভাবে শুস্ক মৌসুমে গেট বন্ধ করে বাংলাদেশকে মরুভুমি করে তিস্তার পানি একক ব্যবহার করছে ভারত সরকার।

বর্ষাকাল শুরু হওয়ায় উজানে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে ভারত তাদের অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এই উজানের ঢলে তিস্তার পানি ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে কয়েক দিনের টানা ভারি বৃষ্টিপাত। ফলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার দিকে এগিয়ে আসছে।

তাই বর্ষাকাল শুরু হলেই বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ টি গেট খুলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢেউয়ের কারণে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পরিবারগুলো।

টানা কয়েকদিন ধরে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ১০/১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চল ডুবে যায়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে কয়েক হাজার পরিবার। তবে সোমবার সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। ঘর বাড়ি থেকে পানি বের হতে শুরু করেছে। পানি না বাড়লে বিকেলের মধ্যে লালমনিরহাটের বন্যা পরিস্থিতির পুরোপুরি উন্নতি হতে পারে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।

তিস্তা ব্যারাজ বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ টানা তিন দিন ধরে বিপদসীমার ১০/১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে তা কমতে শুরু করে।

হাতীবান্ধা উপজেলায় ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের ছয়টি ওয়ার্ড নদী তীরবর্তী। সব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। কয়েক দফা পানি বৃদ্ধির ফলে অর্ধশত বাড়ি বিলীন হয়েছে।

পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় ইতিমধ্যে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসাদের। বরাদ্দ এলে তাদের পুনর্বাসন করা হবে। তিস্তার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষায় কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এ সম্পর্কিত আরও খবর