শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী 'এসকে ভাই' কি আত্মসমর্পণে আসছেন?

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান ও মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-12 00:07:00

কক্সবাজারের টেকনাফ কেন্দ্রিক শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে 'এসকে ভাই' ওরফে সাইফুল করিম প্রথম সারির একজন ব্যবসায়ী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ইয়াবার গডফাদারদের তালিকায় প্রথম ২/১ জনের মধ্যে রয়েছে তার নাম।

স্থানীয়রা বলছেন, সাইফুল করিমকে যদি না দমানো যায়। ইয়াবা ব্যবসা নির্মূল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। কেননা ইয়াবার প্রবেশদ্বার খ্যাত এই অঞ্চলের অধিকাংশ ইয়াবা চালান তার হাত ধরে আসে। তার নিয়ন্ত্রণেই কক্সবাজার থেকে ইয়াবা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।

তাই সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে করা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সর্বশেষ তালিকায় 'টপ ইয়াবা ব্যবসায়ী' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে টেকনাফের শীলবনিয়া পাড়ার এই সাইফুল করিমকে। সাইফুল করিম সারাদেশে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছে ‘এসকে ভাই’ নামেই পরিচিত।

তাই প্রশ্ন উঠছে, চলমান মাদক ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন কিনা এসকে ভাই নামে পরিচিত এই ইয়াবা ব্যবসায়ী!

অন্যদিকে আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সাবেক একজন জনপ্রতিনিধির তিন ভাই, উপজেলা চেয়ারম্যান পুত্র, পৌর কাউন্সিলরসহ ৭/৮ ইউপি সদস্য মিলে প্রায় ৭০ জন গডফাদার ও ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পুলিশের নিরাপত্তায় চলে গেছেন। সরকারি নির্দেশনা পেলেই আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার সমন্বয়ক ও কক্সবাজার জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে যারা সেফহোমে রয়েছেন, তারা হলেন, উখিয়া-টেকনাফের সাবেক জনপ্রতিনিধির তিন ভাই শফিকুল ইসলাম, আব্দুল আমিন, ফয়সাল রহমান। তাছাড়া তার আত্মীয় শাহেদ রহমান নিপু এবং শাহেদ কামাল।

টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমেদের ছেলে দিদার মিয়া, পৌর কাউন্সিলর নুরুল বশর ওরফে নুসরাত। আলী আহমদ চেয়ারম্যানের দুই ছেলে আব্দুর রহমান ও জিয়াউর রহমান সহ অনেকেই।

তবে শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী সাইফুল করিম ওরফে এসকে ভাই এখনো আত্মসমর্পণে আসেনি। এই মাদক ব্যবসায়ী সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আগামী দুই একদিনের মধ্যেই আত্মসমর্পণে আসবেন। ইয়াবার গডফাদারের তালিকায় থাকা এই মাদক ব্যবসায়ী।

এদিকে এই আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার প্রধান সমন্বয়ক বেসরকারি টেলিভিশনের চট্টগ্রাম অফিসের প্রতিবেদক এস এম আকরাম হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ইতিমধ্যে অধিকাংশ গডফাদার খ্যাত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা একটি নিরাপদ স্থানে চলে গেছে। হাতে গোনা  দুই একজন বাহিরে আছেন। তারা সহ আনুমানিক দেড়শ জনের মতো আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে।

"এসকে ভাইয়ের" আত্মসমর্পণের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনিও বিষয়টি অস্বীকার করেননি। দুই এক দিনের মধ্যে সেও আত্মসমর্পণ করবেন বলে আশা করছেন এই  সমন্বয়কারী।

সার্বিক বিষয়ে কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ইয়াবা নির্মূলে কক্সবাজার জেলা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে আত্মসমর্পণ করার জন্য শীর্ষ ব্যবসায়ীসহ অন্যরা নিরাপদ স্থানে চলে এসেছে। যারা আমাদের কাছে এসেছেন তারা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ইয়াবার গডফাদার কিংবা শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী যারা এখনো আত্মসমর্পণে আসেননি। কেউই আইনের বাইরে থাকতে পারবে না। যে কোন মূল্যেই তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। যে কয়েকজন বাহিরে আছেন তারাও আত্মসমর্পণ করবেন।

কে এই সাইফুল করিম (এসকে ভাই)

২০০৬ সাল থেকে ইয়াবা কারবারে জড়িত সাইফুল করিম। ছাত্রজীবনে ছাত্রদল করতেন। বিয়ে করেন টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহর বোনকে। সরকার বদল হলেও মাদক ব্যবসার হাল ছাড়েননি তিনি। মিয়ানমারের মংডুর বাসিন্দা ও রোহিঙ্গা সিন্ডিকেটের সঙ্গে রয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। যারা কিচেন ল্যাব বা বাসার কারখানায় ইয়াবা তৈরি করে তাদের কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে সাইফুলের লোকজন।  শুরুতে টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে কারবার পরিচালনা করলেও ২০১১ সালের পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক ইয়াবার কারবার শুরু করেন সাইফুল। ইয়ার ব্যবসার মাধ্যমে অঢেল টাকা ধন সম্পদ বানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে র‍্যাব-পুলিশের অভিযানে বাড়ি ছাড়া সাইফুল পর্দার আড়ালে থেকেও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর