'বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যেতে খরচ বেশি, বেতন কম'

, জাতীয়

শরীফ ইকবাল রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, র্বাতা ২৪.কম, নরসিংদী | 2024-07-08 20:43:39

প্রবাসীরা মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে থাকেন সেখানে তারা নাগরিকত্ব তো দূরের কথা স্থায়ীভাবে থাকারও অনুমতি পান না। তাদের সবাইকে দেশে ফিরে আসতে হয়। কেউ অর্থ নিয়ে ফেরেন, আবার কেউবা বেদনা নিয়ে খালি হাতে ফেরেন। সব প্রবাসীদের টেকসই পুনরেকত্রীকরণে নিশ্চিত করতে আমাদের সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।

সোমবার (৮ জুলাই) ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের উদ্যোগে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম একথা বলেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোবাশ্বের আলম এর সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম আরও বলেন, প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় একটি চালিকাশক্তি, আর সেই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদেরকে দেশে ফেরত আসার পরে ব্র্যাকের সহযোগিতা সরকারের কাজ সহজ করছে। তবে বিদেশ যাওয়ার আগে আমাদেরকে দক্ষ হতে হবে। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, অভিবাসনকে যেমন নিরাপদ করতে হবে তেমনি বিদেশ-ফেরত মানুষের পাশেও দাঁড়াতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে এই কাজগুলো এগিয়ে নিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়ের মাধ্যমে নরসিংদীকে প্রবাসীবান্ধব জেলা হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

সভায় মূল প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে ব্র্যাক অভিবাসন প্রকল্পের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেতে খরচ সবথেকে বেশী কিন্তু বেতনের দিক দিয়ে সবথেকে কম। কারণ বাংলাদেশ থেকে অধিকাংশ অভিবাসী যাচ্ছে অদক্ষ হয়ে। এছাড়া বিদেশ যাওয়ারে পথটি সরাসরি না গিয়ে সহজে ও দ্রুত যাওয়ার জন্য মধ্যসত্বভোগী (দালাল) এর সহায়তা নিয়ে থাকেন। এ কারণে বাংলাদেশী অভিবাসী শ্রমিকরা সঠিক কাজ পায়না আর তার জন্য উপযুক্ত বেতনও পোয়না। ফলে দেশে ধারদেনা করে যাওয়া অর্থ পরিশোধ করতে তাগাদা দেয়া হয়। এসব কারনে হয় সে দেশে চলে আসে না হয় মানসিক রোগেন।

তিনি আরও বলেন, প্রবাসীদের অবদানে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রবাসীরা শুধু টাকা পাঠানোর যন্ত্র না। তাদের বিপদে পাশে থাকতে হবে। এ কারণেই
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্র্যাকের যৌথ অর্থায়নে বিদেশ-ফেরতদের জন্য প্রত্যাশা-২ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। সবাই মিলে আমাদের এই বিদেশ-ফেরত মানুষদের পাশে থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ এম ফজল-ই-খুদা বলেন, ‘অদক্ষ ও অসচেতন মানুষই মানবপাচার বা অনিয়মিত অভিবাসনের শিকার হচ্ছেন। সমস্যা সমাধানে সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

নরসিংদীর সিভিল সার্জন ডা. ফারহানা আহমেদ বলেন, ‘বিদেশ-ফেরতদের মধ্যে যারা ব্যর্থ হয়ে দেশে ফিরেছেন তাদেরকে আমরা দুর্বল মনে না করে তাদের পাশে দাঁড়ালে, তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। দেশে-প্রবাসে সবখানে আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের পাশে থাকতে হবে।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নরসিংদী প্রেসক্লাবের সভাপতি মো: নুরুল ইসলাম, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মো: জামাল হোসেন, সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মাসুদুল হাসান তাপস, নরসিংদী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী নাবিলা নুঝাত, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি ও জরিপ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের এমআরএসসি কো-অডিনেটর মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এর সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ, জেলা প্রশাসককের কার্যালয়ের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী কমিশনার মেহেদী হাসান পাটোয়ারী, ব্র্যাক মাইগ্রেশন কর্মসূচির ম্যানেজার আতিকুর রহমান নাহিদ ও শেখ মোহাম্মদ সালেহ্ রাব্বী, ব্র্যাকের জেলা সমন্বয়কারী মোঃ মিজানুর রহমান, মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইন্ট্রিগ্রেশন সাপোর্ট সেন্টারসহ নরসিংদীতে কর্মরত ব্র্যাকের বিভিন্ন প্রোগ্রামের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিগণ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নরসিংদী জেলার সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষক, ধর্মীয় ব্যাক্তিত্ব, প্রবাস বন্ধু ফোরাম সদস্য ও বিদেশ ফেরত অভিবাসী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর