গ্রেফতার বাণিজ্য প্রসঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে ডিএমপির যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকার বলেছেন, কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে যদি গ্রেফতার বাণিজ্যের প্রমাণ পাওয়া যায় তাকে শুধু প্রত্যাহার নয়, তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে ডিএমপি সদর দফতরের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
থানায় থানায় গ্রেফতার বাণিজ্য চলছে। এমন প্রশ্নের জবাবে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, গ্রেফতার বাণিজ্য অনেক পুরনো একটি শব্দ। ডিএমপি কমিশনার যেদিন থেকে ব্লক রেইডের নির্দেশ দিয়েছেন সেদিন থেকেই গ্রেফতার বাণিজ্য শব্দের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। যদি এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে দায়ী পুলিশ সদস্যকে শুধু প্রত্যাহার নয়, তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখা যাচ্ছে নিরস্ত্র মানুষকে পুলিশ গুলি করছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে পুলিশ বিব্রত কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির এই যুগ্ম কমিশনার বলেন, প্রত্যেকটি ঘটনার পূর্বাপর বিচার করতে হবে। আমাদের সদস্য যদি গুলি করে থাকে কোন প্রেক্ষাপটে গুলি করেছে সেগুলো পর্যালোচনা করা হবে। যেসব ঘটনায় মামলা হয়েছে প্রত্যেকটি মামলার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করা হবে। যেন প্রশ্ন না ওঠে পুলিশ মামলা নিয়ে পক্ষপাত করছে।
তিনি বলেন, যখন একটি মামলা রুজু করা হয় তখন কে কোন দলের, কে কোন মতের, কে কোন পক্ষের বা বিপক্ষের এগুলো আমাদের কাছে কোনো বিচার্য বিষয় নয়। সাধারণ মানুষ যখন একটি এজাহার দায়ের করেন তখন পুলিশের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। তাই এখানে কোনো দল-মত কিংবা পক্ষ-বিপক্ষের সুযোগ নেই। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং যেই দোষী হবে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অভিযোগ আছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এমন প্রশ্নের জবাবে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ব্লক রেইড পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো সাধারণ মানুষ, সাধারণ শিক্ষার্থী এবং নিরপরাধ কাউকে ধরার বিন্দুমাত্র কোনো সুযোগ নেই। ডিএমপি কমিশনারের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এ কারণে ব্লক রেইডে ডিএমপির সিনিয়র অফিসারদের মোতায়েন করা হয়েছে। যেন ব্লক রেইডে কোনো ধরনের আইনের ব্যতয় না ঘটে, নিরপরাধ মানুষ যেন বিন্দুমাত্র পুলিশের দ্বারা হয়রানির শিকার না হয়। এরপরেও যদি কোনো ব্যতয় হয় সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তবে অপরাধীদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ তথা ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশের কোনো বিরোধ নেই জানিয়ে যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থী আমাদের সন্তান সমতুল্য। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিষয়ে পুলিশ অত্যন্ত সংবেদনশীল। পুলিশের টার্গেট যারা নাশকতাকারী, যারা মেট্রোরেল, সেতু ভবন, টোল প্লাজা ও বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি পুড়িয়েছে। আমাদের শত্রু জামায়াত-শিবির চক্র এবং বিএনপির সন্ত্রাসীরা। তাদেরকে ধরার জন্য ভিডিও ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দেখে কাজ করছি।
তিনি বলেন, গত কয়েক দিনে ঢাকা শহরে যে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও প্রাণহানির ঘটনায় ডিএমপির ৫০টি থানায় ২৬৪টি মামলা রুজু হয়েছে। আরও ৪-৫টি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব মামলায় ২৮৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিমান্ডে আনা হয়েছে অসংখ্য আসামিকে। রিমান্ডে থাকা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে যে তথ্য পেয়েছি সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখছি।
২৬৪টি মামলার ভেতরে নিহতের ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকায় বিভিন্ন থানায় ৫৩টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর ভেতর নিহতের পরিবার বাদী হয়েছে এবং কিছু মামলার বাদী রাষ্ট্রের পক্ষে পুলিশ বাদী হয়েছে।
বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, এসব মামলা শতভাগ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করা হবে। পুলিশ এখানে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে তদন্ত করবে। সেই মামলাগুলো ডিএমপি কমিশনার নিজে তদন্ত তদারকি করবেন। সিনিয়র অফিসারদের এসব মামলা মনিটরিংয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেকোনো হত্যাকাণ্ড অবশ্যই দুঃখজনক। পুলিশ কোনো মৃত্যু প্রত্যাশা করে না।
রাজধানীতে কিছু এলাকায় ব্লক রেইড কিছু এলাকায় টার্গেট অভিযান চলছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।