সৈয়দ আশরাফকে স্মরণ করে কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 02:49:30

প্রয়াত আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কথা স্মরণ করে কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ সময় আবেগআপ্লুত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি নিজের আপন ভাইয়ের মতোই তাকে দেখতাম। আজ কিশোরগঞ্জবাসীকে ধন্যবাদ জানাই, আশরাফ অসুস্থ থাকা অবস্থায় তাকে আমরা দলীয় মনোনয়ন দেই। তাকে বাদ দিতে পারিনি। তখনও সে ব্যাংককে চিকিৎসাধীন। এই যে তার অনুপস্থিতিতে তাকে মনোনয়ন দিলাম, কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুরের মানুষ স্বত:স্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করেছে। যেদিন আমরা শপথ নেবো সেদিনই তার মৃত্যুর খবরটা পেলাম। যা সবচেয়ে কষ্টকর , যে সে শপথটাও নিতে পারল না।

বুধবার (৩০ জানুয়ারি) একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

লন্ডনের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লন্ডনে আওয়ামী লীগের শাখা গড়ে তোলার জন্য আমি আশারাফসহ সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করেছি। সে আমাকে বোনের মতোই জানত। আশরাফ খুব মেধাবী ছিল। এমনও সময় ছিল যখন তার কাছে খাবারের টাকাও ছিল না। সেখানে সে কাজও করত, পাশাপাশি রাজনীতিও করত। ১৯৮০ সালে আমাকে একদিন ফোন করল, আপা অনেক দিন হয়ে গেলো বাড়ির রান্না খাইনা। আমি বল্লাম চলে আসো। এতো সহজ-সরল ছিল, বলত আসব যে আমার ট্রেনের ভাড়াটাও তো নেই। আমি বলেছিলাম, ব্যবস্থা করে আসো, আমি পরে ব্যবস্থা করব। বোনের কাছে যেভাবে আবদার করে, আশরাফ সেভাবে আমার কাছে আবদার করত। ভাইদের হারিয়ে যাদের খুব কাছে পেয়েছিলাম আশরাফ তাদের মধ্যে একজন।

তিনি বলেন, আমি আশরাফকে ১৯৯৬ সালে লন্ডন থেকে নির্বাচন করার জন্য দেশে আসতে বলেছিলাম। সেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হয়, আমরা যখন সরকার গঠন করি তখন তাকে প্রতিমন্ত্রী করি। আমরা আবার সরকার গঠন করি তখন তাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলাম এবং সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছে আশরাফ। আশরাফ একজন জ্ঞানী লোক। তাকে হারানো আমাদের দল ও দেশের জন্য ক্ষতি। কিন্তু ক্যানসারের মতো একটা রোগ তাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে গেলো।

তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিল সৈয়দ আশরাফ। আজ আমরা যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি সেক্ষেত্রে সৈয়দ আশরাফেরও বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল। অসম্ভব সহজ সরল ছিল সে। তাঁর বাবা দেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন, সৈয়দ আশরাফও দীর্ঘদিন মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু সবসময় অসম্ভব সৎ জীবন-যাপন করেছে। ওর টাকা নেই, পয়সা নেই। কষ্ট করে চলতে হতো। তাঁর চিকিৎসার জন্য যা যা করার আমি তা করেছি। তাঁর মতো একজন প্রজ্ঞাবান ও জ্ঞানী রাজনীতিবিদের চলে যাওয়ার ক্ষতি কোনদিন পূরণ হবার নয়।

তৃণমূল ছাত্র রাজনীতি থেকে আশরাফ উঠে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে সে জড়িত ছিল। তাকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলাম, পরবর্তীতে তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য করেছিলাম। তার রাজনৈতিক জ্ঞান ছিল অনেক ভালো। সারা বিশ্বের রাজনৈতিক বিষয় ছিল তার নখদর্পণে। সে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যখন অসুস্থ হলেন মন্ত্রী হিসেবে তার চিকিৎসার জন্য যা যা দরকার দিতে পেরেছি। তার স্ত্রী যখন অসুস্থ হয়, তখনও খোঁজখবর রাখতাম।

শোক প্রস্তাবের ওপর আরও আলোচনা করেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এবং সাবেক বিরোধী দলের নেতা জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য বেগম রওশন এরশাদ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর