ফেনীতে একদিনে সর্বোচ্চ ৩০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলায় বিগত কয়েক বছরের হিসেবে এটি সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।
শনিবার (৩ আগস্ট) জেলা আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মো.সালেহ আহম্মদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ফেনীতে টানা দুইদিন মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিগত কয়েক বছরের হিসেবে সর্বোচ্চ। আগামী দশদিন জেলাজুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি সর্বোচ্চ বিপৎসীমার ২৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে সকালের পর থেকে পানি কিছুটা কমেছে। ইতোমধ্যে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের নয়টি স্থানে ভেঙে অন্তত ২০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি রয়েছে হাজার হাজার মানুষ।
পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সদস্য ফজলুল বারী মনছুর বলেন, ১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০১৮ সালের বন্যা নিজ চোখে দেখেছি। কখনো বাড়িতে পানি ওঠেনি। এবারই প্রথম আমার বাড়িতে পানি উঠল। পুরো এলাকার ভয়াবহ পরিস্থিতি। নদীর পানি না কমলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফেলতির কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বারবার লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে। এক মাস পূর্বে ভেঙে যাওয়ার বাঁধ সংস্কারে গড়িমসি করার কারণে আবারও একই স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। সকাল থেকে পাউবোর কোন কর্মকর্তাকে ভাঙন এলাকায় দেখা যায়নি। আজ সকাল ১১ টার দিকে শালধরে বাঁধ ভেঙে আমার ইউনিয়নের মালিপাথর,পাগলিরকুল, দক্ষিণ শালধর গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে।
টানা বর্ষণে ফেনী শহরের বিভিন্ন এলাকায়ও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। শহরের একাডেমি সড়ক, শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়ক, মিজান রোড, শান্তি কোম্পানি রোড, পাঠান বাড়ি এলাকাসহ নিচু এলাকায় পানি জমে গেছে।সকাল থেকে সড়কে চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়েন শহরবাসী।বিভিন্ন সড়ক পানির নিচে ডুবে যাওয়াতে রাস্তায় জাল মেরে মাছ ধরতে দেখা গেছে একাধিক যুবক ও সাধারণ মানুষকে।
অন্যদিকে গ্রামের অধিকাংশ নিচু এলাকা ডুবে পুকুরে চাষের মাছ বেরিয়ে যাওয়াতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একাধিক খামারি। নিজকুঞ্জরা এলাকার আলাউদ্দিন নামে একজন বলেন, টানা বৃষ্টিতে দিঘির সব মাছ জমিতে চলে গেছে। কমপক্ষে ২ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজা হাবিব শাপলা জানান,প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা মোতাবেক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।পরশুরাম পৌরসভার উত্তর বাজার এলাকায় বন্যার কারণে আটকে যাওয়া প্রায় ১০ টি পরিবারকে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।