ক্ষত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তেজগাঁও উপ পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-08-09 15:18:51

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষমতা হস্তান্তরের পরই হামলা চালানো হয় রাজধানীর অধিকাংশ থানায়। দেয়া হয় আগুন, করা হয় ভাঙচুর ও লুটপাট। যার ক্ষত নিয়েই দাঁড়িয়ে রয়েছে তেজগাঁও উপ পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়।

একই সঙ্গে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্ব-স্ব ইউনিটে যোগদান করে কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশের পর আল্টিমেটাম শেষ হলেও কর্মস্থলে ফেরেনি তেজগাঁও উপ পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের পুলিশ কর্মকর্তারা। ফলে পুলিশ শুন্য তেজগাঁও কার্যালয় এখন বহন করছে শুধুই ক্ষত চিহ্ন। 


শুক্রবার (৯ আগস্ট) সকালে তেজগাঁও উপ পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তেজগাঁও উপ পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় এর একটিও জানালা দরজা নেই। সবই ভেঙে ফেলা হয়েছে। নেই কোন ফ্যান লাইটসহ কোন ধরনের বৈদ্যুতিক লাইন। এমনকি খুলে নেয়া হয়েছে বাথরুমের হাই কমোডও।

প্রধান ফটক অতিক্রম করে ভেতরে পেছনের ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, সে ভবনের সবকিছুই পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে আগুনে। আগুনের তীব্রতায় পুড়ে ছাই হওয়া কাগজপত্র ও বিভিন্ন পোড়া সামগ্রীর অবর্জনায় স্তুুপ বেঁধেছে ভবনের ভেতরে। থানায় নেই কোন পুলিশ সদস্য। এমনকি নেই নিরাপত্তারক্ষীও। কার্যালয়ের সামনেই পরে আছে দুর্বৃত্তদের হামলায় ভেঙে ফেলা দেয়ালের ইটের স্তুপও। 

আমির হামজা নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বার্তা ২৪.কমকে বলেন, শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর পর উপ পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় থেকে সব পুলিশ বেড়িয়ে চলে যায়। এরপর সন্ধার দিকে থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত কোন পুলিশ আসেনি।


এদিকে রাজধানীজুড়ে সংঘাতের ঘটনায় নিহত পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষা না দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পলায়নের ঘটনায় ক্ষোভ বিরাজ করছে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে। ফলে রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রাধীন পুলিশের চাকরি ও পলায়নকৃত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতসহ বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করেছেন অধস্তন কর্মকর্তারা। দাবি না মেনে নেয়া হলে কোন ধরনের প্রশাসনিক কাজে যোগ দিবেন না বলে জানিয়েছেন তারা।

অধস্তন কর্মকর্তারা বলেছেন, আমাদের উপর আক্রমণ হলে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছি। তারা আমাদের সাহায্য না করে নিজেদের মতন পালিয়ে গেছে। তাদের কারণে আজ সারাদেশে আমাদের এতো ভায়েরা মারা গেছে। আমরা এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিচার চাই। তাদের চাকরি চ্যুত করতে হবে এবং কঠোর বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা তাদের অপকর্মের সাক্ষী দিবো। আমরা আদালতের কাটগড়ায় দাড়াবো।

তারা বলেন, আমরা কারোর গোলাম হয়ে থাকতে চাইনা। আমাদের চাকরি রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রাধীন করতে হবে। আমরা আর কোন রাজনৈতিক দলের আন্ডারে পরাধীন থাকতে চাই না।

তবে এর আগে গত বুধবার (৭ আগস্ট) বিকাল ৪টার দিকে পুলিশ সদস্যদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্ব-স্ব ইউনিটে যোগদানের নির্দেশ দেন নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম। নির্দেশনা অনুযায়ী আজ সন্ধার মধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরতে বলা হয় পুলিশ সদস্যদের।
নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল (৮ আগস্ট) সন্ধার মধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরতে বলা হয় পুলিশ সদস্যদের।


সে সময় দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় পুলিশের উপর আক্রমণের জন্য পুলিশ বাহিনীর কিছু উচ্চাভিলাষী, অপেশাদার কর্মকর্তার সিদ্ধান্তকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। এর কারণে অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। একটি শূন্যস্থান হয়তো তৈরি হয়েছে। তবে সেটি পূরণে আমরা কাজ শুরু করেছি। আশা করছি অচিরেই এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা নতুন করে শুরু করতে চাই। তাই সবাইকে ৮ আগস্ট সন্ধ্যার মধ্যে কাজে ফেরার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।’

ছাত্র আন্দোলন দমনে অপারেশনাল ভুলত্রুটি থাকার কথা স্বীকার করে আইজিপি বলেন, ‘ছাত্র, সাধারণ মানুষ, পুলিশসহ অনেকেই নিহত হয়েছেন। সব কিছুর জন্য আইজিপি হিসেবে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।’

তিনি সবার সহযোগিতা আহ্বান করেন। পুলিশের থানাগুলোকে স্থানীয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সচেতন মানুষ, সাংবাদিকসহ জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে একটি নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি করার নির্দেশ দেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর