প্রথম দিনেই হাজারো প্রাণের কলরবে জমে উঠলো বইমেলা

ঢাকা, জাতীয়

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-13 13:50:14

প্রগতিশীল লেখক হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন ‘বইয়ের পাতায় প্রদীপ জ্বলে/ বইয়ের পাতা স্বপ্ন বলে’। সেই প্রদীপ জ্বালাতে আর স্বপ্নেরগাঁথা তৈরিতে শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত ‘অমর একুশে বইমেলা।’ দীর্ঘ একমাসের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আবারও মুখর হয়ে উঠবে পাঠক-লেখক-প্রকাশকসহ বইপ্রেমী প্রাণের কলরবে।

প্রতি বছরের মতো এবারও বই মেলার উদ্বোধন করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন ও মেলা পরিদর্শন শেষে বিকেল ৫ টা ৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী মেলা প্রাঙ্গণ ছেড়ে যেতে না-যেতেই জনস্রোত নামে মেলার দুই অংশ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সাড়ে ৫ টার দিকে তারা মেলা প্রাঙ্গণে লাইন ধরে প্রবেশ করতে শুরু করেন। কিছুক্ষণ বাদেই বইপ্রেমীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে চারদিক। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় অনেকেই এসেছেন মেলায় ঘুরতে।

গ্রন্থমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বার্তা২৪.কমকে বলেন, বায়ান্নর চেতনা থেকে একাত্তর। যার মধ্যে জড়িয়ে আছে ৫৪, ৬২, ৬৬ ও ৬৯। বাঙালির স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা অর্জনের এই পথচলাকে এবার উদ্‌যাপন করা হবে মেলাজুড়ে। যে জন্য মেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে 'বিজয় :বায়ান্ন থেকে একাত্তর (নব পর্যায়)'। সেই সঙ্গে ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও ২০২১ সালে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপনের যাত্রাও শুরু হবে এ মেলা থেকে। নতুন অনেক কিছু সংযোজন করে অন্যান্যবারের চেয়ে এবার আরও সুন্দর ও পরিশীলিত করে সাজানো হয়েছে।

সরেজমিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, প্রতিবছরের মতো এবারও মেলার প্রথমদিনে নানা অসঙ্গতি দেখতে পাওয়া যায়। প্রাঙ্গণজুড়ে রয়েছে আবর্জনা। চারদিকে অনেক ধুলা-বালি উড়তেও দেখা যায়। সবার স্টল সজ্জার কাজ শেষ হয়নি। অনেক স্টলে দেখা গেছে এখনও রঙের কাজ করতে। প্রাঙ্গণ ও উদ্যানে ছড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে স্টল সজ্জার সরঞ্জাম। কারো স্টলে পর্দা দিয়ে বন্ধ দেখা যায়। পাঠক-ক্রেতাদের দেখে অনেক প্রকাশকও ব্যস্ত হয়ে পড়েন স্টল খুলতে। কোন কোন স্টলে বই তাকে তোলা শুরু হয়েছে। সদ্য মেলায় আসা বইয়ের ভাঁজ খোলার সঙ্গে সঙ্গে গন্ধ ছড়ায় মেলা প্রাঙ্গণে। মাঘের হালকা হিমেল সন্ধ্যার ঝিরিঝিরি বাতাসে এ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।

প্রথম দিন বলেই হয়তো বই কেনার চেয়ে বই দেখার দিকেই বেশি আগ্রহ পাঠকদের। কাউকে কাউকে বইও কিনতেও দেখা গেছে। বিক্রেতারাও বই দেখিয়েছেন আগ্রহ নিয়ে। অনেকে দর্শনার্থী সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন প্রকাশনার নতুন বইয়ের ক্যাটালগ। কোন কোন স্টলে বিক্রয়কর্মীরা প্রস্তুত হওয়ার আগেই তাদের কাছে আসা দর্শনার্থী প্রশ্ন ছোড়েন, 'অমুক লেখকের নতুন কোনো বই বের হয়েছে?' বিক্রয়কর্মীরাও হাসিমুখে বলছেন, 'ওনার এই বইটি বের হয়েছে।' অনেক শিশু কিশোরকেও নতুন বই বগলদাবা করে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, গতবারের চেয়ে প্রায় ২৫ হাজার বর্গফুট বেশি পরিসরে এবার মেলা হচ্ছে।  বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং একাডেমি সামনের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় তিন লাখ বর্গফুট জায়গায় স্টল সাজানো হয়েছে। মেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণটির নামকরণ করা হয়েছে ভাষা শহীদ বরকতের নামে। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণকে চারটি চত্বরে ভাগ করে উৎসর্গ করা হয়েছে ভাষাশহীদ সালাম, রফিক, জব্বার ও শফিউরের নামে। পাঁচ ভাষাশহীদের নামে উৎসর্গকৃত এবারের মেলার দুই প্রাঙ্গণের পাঁচটির প্রতিটি চত্বরের সাজসজ্জায় পৃথক রঙের ব্যবহার করা হয়েছে। লাল, নীল, সবুজ, হলুদ ও মেজেন্টা রঙের প্রাধান্যে সাজানো হয়েছে।

একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৪টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ১৫০টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৯৫টি প্রকাশনা সংস্থাকে ৬২০টি ইউনিট বা স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে ১৮০টি লিটলম্যাগকে ১৫৫টি স্টল দেওয়া হয়েছে। ২৫টি স্টলে দুটি করে লিটল ম্যাগাজিনকে স্থান দেওয়া হয়েছে। অন্য ১৩০টি প্রতিষ্ঠান পৃথক স্টল পেয়েছে। একক প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন, তাদের বই বিক্রি ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে। গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি ও মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। এবারও শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। এই কর্নারটি শিশুকিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও 'শিশুপ্রহর' ঘোষণা করা হবে। এবার 'লেখক বলছি' মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। যাতে প্রতিদিন পাঁচজন করে লেখক নিজেদের নতুন বই নিয়ে পাঠকের সঙ্গে কথা বলবেন।  শিশু চত্বর 'তারুণ্যের বই' নামে একটি বিষয় যুক্ত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শিশু-কিশোরদের বইপাঠে উৎসাহিত করা হবে।

গ্রন্থমেলায় টিএসসি ও দোয়েল চত্বর উভয় দিক দিয়ে দুটি মূল প্রবেশপথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাইরের ছয়টি পথ থাকছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর