হাসপাতালের বিছানায় জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে কাতরাচ্ছেন শামসুদ্দিন মিয়া (৩৩)। কাজ থেকে ফিরে প্রচন্ড জ্বর ও বমি সাথে পেটে ব্যথা নিয়ে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ভর্তি হন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধরা পড়ে ডেঙ্গু। পেশায় রাজমিস্ত্রী শামসুদ্দিন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় উদ্বিগ্ন পরিবারের লোকজন।
ঠিক পাশের বিছানায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আছেন মিরপুর বড়বাগবাসী রুবেল। এর পাশাপাশি মেডিসিন বিভাগে এরকম অনেক ডেঙ্গুরোগী।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় মেডিসিন বিভাগের শুধু মাত্র ৫২৭ ওয়ার্ডেই ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ১৫ জন। অন্যান্য ওয়ার্ড গুলোতে আরও। প্রতিদিন এই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল হাসপাতালের সহকারী পরিসংখ্যান কর্মকর্তা এ এস এম কামরুজ্জামান সুবর্ন বার্তা ২৪.কমকে জানান গত ২৪ ঘন্টায় ২২ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছে। এখন বর্তমান ৪১ জন রোগী ভর্তি আছে যার মধ্যে পুরুষ সংখ্যা বেশি। এখনো পর্যন্ত কারোর মৃত্যু হয়নি হাসপাতালটিতে। এবছর এখনো পর্যন্ত ১০৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে যার মধ্যে ৬৮ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে বাকি চিকিৎসাধীন অবস্থায়।
চিকিৎসকরা বলছেন অল্প লক্ষনের মধ্য দিয়েই ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন রোগীরা। এতে অবহেলা না করে সচেতন হতে হবে।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের ৫২৮ নং মহিলা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় সেখানেও রয়েছে অনেক মহিলা ডেঙ্গুরোগী। সেখানে ভর্তি থাকা মিরপুর শেওড়াপাড়াবাসী মিম (১৫) বলেন, আমার গত মাস থেকে ছেড়ে ছেড়ে জ্বর আসে সাথে প্রচন্ড মাথা ব্যথা। ৫ দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এসে পরীক্ষা করে শুনি ডেঙ্গু হয়েছে।
প্রসঙ্গত প্রতিবছর বাংলাদেশে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর জন্য রেডজোন হিসেবে ধরা হয়। এসময় এডিস মশার বিস্তার বাড়ে। বছর জুড়ে এর প্রকোপ থাকলেও এই সময়টাতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে। ডেঙ্গু রোগে মৃত্যুও হয় অনেকের। তবে ডেঙ্গু বিস্তারের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার আক্রান্তের সংখ্যা কম থাকলেও অবহেলার সুযোগ, নেই গেলো দু মাসে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিন এ সংখ্যা বাড়ছে। ফলে সচেতনতা বাড়ানোর কথা বলছেন চিকিৎসকরা।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. গোলাম ছগির (অপু) বার্তা ২৪.কম কে বলেন, গতবারের তুলনায় এবছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশ কম। তবে সচেতনতায় জোর দিতে হবে।এ সময় তিনি কিছু পরামর্শ ও সচেতনতা অবলম্বন করতে বলেন তিনি বলেন আমরা ডেঙ্গুকে কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করি এ, বি,সি । ক্যাটাগরি এ হলে জ্বর থাকে যা সাধারন ওষুধ খাওয়া-দাওয়া ও বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়। বি ও সি ক্যাটাগরি তে জ্বরের সাথে পেটে ব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা,প্রেসার কমে যাওয়া, জন্ডিস, শরীর দুর্বল লাগা, মাথা ঘুরানোসহ এসব উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার কথা বলি। এবছর ডেঙ্গুর নতুন কোন ধরন সিনড্রোম দেখা যায়নি। ডেঙ্গু রোগে সচেতনতাই সবচেয়ে জরুরী বলে মনে করেন এ বিশেষজ্ঞ। যেখানে সেখানে জমানো পানি ফেলে দিতে ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মশারির ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া মশা থেকে বাচতে নিজের চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দেন।