ভরসা রাখাই যায় রিজেন্ট এয়ারওয়েজের আতিথেয়তায়

ঢাকা, জাতীয়

কলকাতা করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 10:17:44

কলকাতা : সাদা মেঘের ভেলায় ভেসে প্লেন তখন ৩৯ হাজার ফুট উচ্চতায়। আরামদায়ক আসনে বসে নাস্তাটা সবেমাত্র উদরপূর্তি করেছি। থেকে থেকে অনুভব করছি ঝাঁকুনি। পাশে বসা আপা বললো, ‘ভয় পেয়ো না। এটাকে এয়ার ‘টার্বুলেন্স’ বলে।

‘টার্বুলেন্স’ কি- ব্যাখ্যা করে বলেই চলছিলো আপা, বায়ুমন্ডলে কিছুকিছু জায়গায় ফাঁকা থাকে। সেই সবের ভেতর দিয়ে উড়োজাহাজ গেলে ওরকম কেঁপে ওঠে। অনেকটা সমুদ্র সৈকতের চোরাবালির মত। তবে আকাশ চোরাবালির মত অতটা ভয়ঙ্কর নয়। এছাড়া প্লেনেও আরেকটা একটা অনুভব হয়। নাগরদলোর মত। মনে হবে হঠাৎ ওপর থেকে নিচে পড়ছি। এটাও একটা মজার বিষয়। যে সব স্থানে বায়ুমন্ডলের চাপ থাকে না তখন সাময়িক প্লেনের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেন অভিজ্ঞ পাইলট। নিচের দিকে নামতে থাকে। জায়গা মত পাইলট ফের ধরে নেয় স্টিয়ারিং। কারণ সম্পূর্ণ প্লেন চলে বায়ুমন্ডলের চাপের মধ্য দিয়ে।

আপার চোখ তখনও ফ্লাইট মুডে রাখা আইফোনের ই-বুকের ‘পরিণীতা’ উপন্যাসে। আপার কথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলাম। প্লেন এগিয়ে চলছে আকাশের বুক চিরে।

ঠিক করেছিলাম, এবারে শীতের ছুটিটা ভিন্ন ভাবে কাটাবো। এমন একটা সফর নেব যাতে অল্পদিনে দুই দেশ ভ্রমণ করা যায়। প্ল্যান মাফিক কাজ; ঠিক হলো চিটাগাং বা ঢাকার থেকে ব্যাংকক। চাইছিলাম এমন একটা এয়ারলাইন্সের সহযোগিতা নিতে যাদের দুই দেশেই পরিষেবা আছে। আবার সাধ থাকলেই তো হয় না সাধ্যিও থাকতে হবে। নজর কাড়লো রিজেন্ট এয়ারওয়েজর পরিষেবায়। আপাও জানালো রিজেন্ট এয়ার তাঁর কাছেও কমফোর্টেবেল।

কলকাতা থেকে সঠিক টাইমে ছাড়লো রিজেন্টের ফ্লাইট। ১৪ হাজার ফুট উচ্চতায় ৪০ মিনিটের মতো সময় লাগে ঢাকায় যেতে। আসন আরামদায়ক হলেও কলকাতা রুটে নাস্তা মোটেও আরামদায়ক নয়। লাগতে পারে ৪০ মিনিট কিন্তু যাচ্ছিতো বিদেশেই! বিদেশিদের কথা ভেবে নাস্তার পরিকল্পনাটায় একটু পরিবর্তন করলে মন্দ হয় না। বাংলাদেশে একটা দিন কাটিয়ে রওনা দিলাম রিজেন্টে করে ব্যাংককে।

প্লেন ৩৯ হাজার ফুট উচ্চতায়, অনুভব করেছিলাম ঝাকুঁনি। তারই বিষয় সবিস্তারে বোঝাচ্ছিলো আপা। শুনতে শুনতে কখন যেনো চোখ লেগে যায়। পাশ থেকে আপার  ডাক, উঠে পড়। ল্যান্ডিং করবে। এসে গেছে সুবর্ণভুমি। অবশ্য থাকার বন্দোবস্ত সব আমরাই করেছিলাম। তবে এখানে বলে রাখা ভালো চাইলে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের সহযোগিতায় পরিকল্পনা করা যেতে পারে হোটেলের।

রিটার্ন ছিলো রিজেন্টেই। যথারীতি নির্ধারিত সময়ে ছাড়লো ফ্লাইট। মেঘের কোলে ধীরে ধীরে চোখের সামনে থেকে হারিয়ে গেলে সুবর্ণভুমির জমি। অনুভব করলাম চাপা অস্থিরতা। নিশ্চিত একই অনুভব করেছিলো আমার দুই সহকর্মী। লোভনীয় নাস্তার সহযোগে চোখ খুলল একবারে চট্টগ্রামে। ঘড়িতে তখন স্থানীয় সময় ৫.২০মিনিট। কেবিন ক্রু -র কথামত ৩৫ মিনিটের মত ঢাকার যাত্রাপথ। চিটাগাং থেকে ছাড়বে ৬টায়।

কথা রাখলো না ক্রু সুন্দরী। পুরো ১ ঘণ্টা ৫ মিনিট মশার যন্ত্রণা সহ্য করলাম। বুঝলাম এক যাত্রীর বিলম্বের কারণে এতটা সময় গেলো। ক্রুর কাছে জানতে চাওয়া একজন যাত্রীর জন্য আমাদের এ ভোগান্তি! জানালো নিরাপত্তার কারণে দেরী। বুঝলাম তার কাছে এই উত্তর দেওয়া ছাড়া আর উপায় নেই। কারণ, যাত্রী ক্ষমতাবান! না হলে তার জন্য ভোগান্তি হয় এতগুলো প্লেন যাত্রীর। ওই এক ঘণ্টার জন্য আর দেখা হলো না বিমানবন্দরে অপেক্ষা করা আমার এক প্রিয়জনের সাথে। কারণ তারও কান্টেটিং ফ্লাইট ছিল ভিন্ন দেশে। বোধহয় এরকম ক্ষমতার অপব্যবহার সারা পৃথিবীতেই হয়!

অবশেষে অবতরণ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। পরদিন কলকাতায় ফেরা। বিদায় জানাতে এলো আমার সহকর্মীরা। যারা আমার পরিবারের অংশ। ক্যাপ্টেনের কণ্ঠ ‘আর কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা অবতরণ করব আন্তর্জাতিক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বিমানবন্দরে। এখানকার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা।

তখনও মন পড়ে আছে আমার সহকর্মীদের কাছে। স্মৃতি রোমন্থন চলছে কাটিয়ে আসা দিনগুলোর। সেই কাটানো দিনগুলোয় আজও কাঁটার মত বিঁধছে ক্ষমতাবান ব্যক্তিটির কারণে দেখা হলো না আরেক প্রিয়জনের সাথে। তবে আবার যদি কোথাও উড়ে যাই নিশ্চিন্তে ভরসা রাখতে পারবো রিজেন্ট এয়ারওয়েজের আতিথেয়তায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর