ভারী বৃষ্টিতে দিনভর সেভাবে প্রভাব না পড়লেও রাতে চট্টগ্রাম শহরের সড়কগুলো যেন পরিণত হয়েছে নদীতে! শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার পর থেকে নগরীর নিম্নাঞ্চল ডুবতে শুরু করে। এতে এসব এলাকার সড়কগুলোতে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি ওঠে যায়।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত থেকেই চট্টগ্রামে বৃষ্টি পড়ছে। সেই বৃষ্টি শুক্রবার দুপুরে এসে ভারী বর্ষণে রূপ নেই। সঙ্গে ছিল ঝড়ো বাতাসও। এভাবে একটানা বৃষ্টি পড়তে থাকে রাত ১১টা পর্যন্ত। সেই বৃষ্টিতে নগরীর চকবাজার, বহদ্দারহাট, শুলকবহর, মুরাদপুর, কাপাসগোলা, বাকলিয়া, রাহাত্তারপুল, জিইসি, প্রবর্ত্তকমোড়, আগ্রাবাদ, বাকলিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় সড়কে হাঁটু থেকে কোমরপানি উঠে যায়।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টায় সরেজমিনে চকবাজার থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটারের এই সড়কে দেখা যায়, কাঁচাবাজার, কাপাসগোলা, জঙ্গি শাহ মাজার এলাকায় কোথাও হাঁটুসমান, কোথাও কোমর ছুঁয়েছে পানি। সড়কে পানি ওঠায় ইঞ্জিনচালিত গাড়ি চলতে পারছিল না। ফলে রিকশায় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে ফিরতে হচ্ছিল নগরবাসীকে। অনেকে ভাড়া বাঁচাতে হেঁটে ফিরলে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েন।
কাপাসগোলা এলাকায় কথা হয় দোকানি আবদুল মালেকের সঙ্গে। তিনি বলেন, পানি থেকে মনে হয় আমাদের রক্ষা মিলবে না কখনো। বৃৃষ্টি পড়লেই পানি উঠবে, এটাই যেন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর পানি উঠলে ভাড়াও দ্বিগুণ হবে, এটাই যেন আমাদের নিয়তিতে লেখা হয়ে গেছে। দুঃখ করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার যেন নেই!'
জঙ্গিশাহ এলাকায় হাঁটুপানি মাড়িয়ে বাসায় ফিরছিলেন আরেক ব্যবসায়ী ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, চকবাজার এলাকায় আমার দোকানে পানি উঠবে উঠবে করছে। সেজন্য দ্রুত দোকান বন্ধ করে দিয়ে বাসায় ফিরছি। এখন হাঁটিু পানি মাড়িয়ে ফিরতে হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই এই ময়লা পানি নিয়মিত মাড়াতে হওয়ায় অসুখও লেগে থাকে।
জিইসি এলাকায় এক বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সরকারি হাজি মুহাম্মদ মহসিন কলেজের শিক্ষক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'এক পরিচিতজনের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সড়কে কোনো অটোরিকশা পাচ্ছিলাম না। পরে রিকশায় চন্দনপুরা থেকে জিইসির উদ্দেশে রওনা হই। কিন্তু জিইসি পৌঁছতেই দেখি সড়কে হাঁটুপানি। তারপর পানি মাড়িয়ে কোনোমতে বিয়ের অনুষ্ঠানে পৌঁছালাম।'
এর আগে, শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা আবদুল বারেক জানিয়েছিলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটা থেকে শুক্রবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত-এই ২৪ ঘণ্টায় ১১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে, বেলা ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
শনিবার রাত পর্যন্ত এভাবে টানা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান আবদুল বারেক। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। তবে শুক্রবার সকাল ৯টার পর থেকে বৃষ্টি বেড়েছে। বৃষ্টি শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত পর্যন্ত হওয়ার পূর্বাভাস আছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।’
ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের শঙ্কায় নগরীর বাটালি হিল, মতিঝর্ণা, মিয়ার পাহাড়, টাংকির পাহাড়সহ বিভিন্ন পাহাড় ও পাহাড়ের আশপাশের এলাকায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় মসজিদ হতেও সতর্কতামূলক মাইকিং করা হয়। এতে পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসরতদের দ্রুত নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত বাসিন্দারা সরছেন এমন খবর পাওয়া যায়নি।