মোহাম্মদ (সা.)-কে সম্মান জানাতে লাখো মানুষের ঢল

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম | 2024-09-16 17:16:30

পরনে নতুন পাঞ্জাবি, পায়জামা আর টুপি। সারি সারি করে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগোচ্ছে সবাই। কারও মুখে 'ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ...' আবার কেউ কেউ সুর ধরেছেন 'তোরা দেখে যা আমেনা মায়ের কোলে...'। সবাই যে যার মতো প্রিয় নবী মোহাম্মদ (সা.) প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা প্রকাশ করছেন।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এমন দৃশ্য দেখা গেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অনুষ্ঠিত দেশের বৃহৎ জশনে জুলুসে।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় এবারের জুলুছ ৫৩তম জশনে জুলুস অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৯টার দিকে নগরীর ষোলশহর জামেয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকা-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে শুরু হয় জুলুসটি। এতে নেতৃত্ব দেন দরবারে আলীয়া কাদেরিয়া ছিরিকোট শরীফের সাজ্জাদানশীন পীর আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ। অতিথি ছিলেন আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ কাসেম শাহ।

ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল/বার্তা২৪.কম

এ সময় নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর; নারায়ে রেসালত, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা.) সহ নানা স্লোগানে প্রকম্পিত হয় আকাশ-বাতাস। হামদ, নাত, দরুদ পড়তে পড়তে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এরপর জুলুছ দুপুরে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা সংলগ্ন মাঠে গিয়ে জমায়েত হয়। সকাল থেকে সেখানে আলেমরা বক্তব্য দেন।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) নিয়ে আলোচনা শেষে মাঠেই জোহরের নামাজ আদায় করা হয়। এরপর মিলাদ ও দোয়া করা হয়। সবশেষে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন পীর আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবের শাহ। মোনাজাতে তিনি দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সুখ শান্তি সমৃদ্ধি কামনা করেন।
এর আগে ফজরের নামাজের পর বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে বাস, ট্রাক, জিপে করে আসা শুরু করেন ভক্তরা। সুন্নিয়া মাদরাসা, বিবিরহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট জিইসি মোড় এলাকা লোকে লোকারণ্যে পরিণত হয়েছে। জশনে জুলুছে নেমেছে জনস্রোত।

এ জুলুসের প্রথমবারের মতো অংশ নিতে সিলেটের হবিগঞ্জ থেকে এসবেন মাদ্রাসাছাত্র মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হুসাইন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, এই জুলুসের কথা অনেক শুনেছি। ফেসবুকেও দেখেছিম এবার নিজে অংশ নিজে পেরে ভালো লাগছে। এই জুলুসের নেতৃত্ব দেন আহলাদে রসূল৷ তাঁকে দেখেও অনেক ভালো লাগছে৷ এত মানুষ হয়েছে যা আগে কখনো সরাসরি দেখিনি।

ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল/বার্তা২৪.কম

চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে এসেছেন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি গত ২৫ বছর ধরে এই জুলুসের আসছি। মুলত আজকে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোস্তফা মোহাম্মদ স. দুনিয়াতে এসেছেন। তাই এটি আমাদের জন্য বড় খুশির দিন, ঈদের দিন। তিনি না আসলে এ পৃথিবীর কিছুই সৃষ্টি হতো না।

জুলুসে আগত আশেকে রাসূলরা জানান, মূলত এই জুলুসের মাধ্যমে রসূল স. এর যে শান্তির বার্তা সেটি সারা বিশ্বের মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সেই উদ্দেশ্যে সবাই এক হওয়া।

জশনে জুলুস মিডিয়া কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার বলেন, ১৯৭৪ সালের ১২ রবিউল আউয়াল দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরীফের (পাকিস্তান) তৎকালীন সাজ্জাদানশীন, আধ্যাত্মিক সাধক, আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রহ.) এ জশনে জুলুসেরর প্রবর্তন করেন।

এবারের জুলুছে অর্ধকোটি মানুষ অংশ নিচ্ছেন উল্লেখ তিনি বলেন, জুলুছের মধ্য দিয়ে সবার কাছে শান্তির বার্তা বয়ে দেওয়া হয়। আমরা জঙ্গিবাদবিরোধী। আমরা শান্তি-সমৃদ্ধির পক্ষের মানুষ। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মানুষ।

ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল/বার্তা২৪.কম

এদিকে সম্প্রতি হঠাৎ করে দেশে অলি-আল্লাহর মাজার ভাঙার অপসংস্কৃতি শুরু হয়েছে উল্লেখ করে জুলুছে আগত ভক্তরা বলেন, ঘোষণা দিয়ে মাজার ভাঙার অপচেষ্টা চলছে। আমরা আশাকরি সরকার তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। নইলে এদেশের কোটি কেটি সুন্নি জনতা দুর্বৃত্তদের রেহাই দেবে না।

জানা গেছে, আনজুমান সিকিউরিটি ফোর্সের (এএসএফ) ৩০০ প্রশিক্ষিত সদস্য এবার জুলুছের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করেন। এর বাইরে গাউসিয়া কমিটির কর্মী ও জামেয়ার হাজার হাজার ছাত্র স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন।

মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, জুলুছে এক হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও সক্রিয় আছেন সার্বিক নিরাপত্তায়।

জুলুস বিবিরহাট হয়ে মুরাদপুর, মুরাদপুর ট্রাফিক পুলিশ বক্স থেকে ডান দিকে মোড় নিয়ে ষোলশহর ২ নম্বর গেট, ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে জিইসি মোড়, লর্ডস ইন হোটেল থেকে ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর বামে মোড় নিয়ে বিবির হাট থেকে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ ফিরে আসে। এ সময় সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

এছাড়া নগরের বিবিরহাট, মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, হামজারবাগ, শোলকবহর, মির্জারপুল রোডের মুখ, বায়েজিদ বোস্তামী রোডের মুখ (শেরশাহ মোড়), বেবি সুপার মার্কেট, প্রবর্তক মোড়ের মুখ, জাকির হোসেন রোডের মুখ, গোলপাহাড় রোডের মুখ ও পুনাক মোড়ে রোড ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ডাইভারশন করা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর