আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ইলিশ পাঠানোর সরকারি নির্দেশনায় প্রভাব পড়েছে বরিশাল নগরীর পোর্টরোড ইলিশ মোকামে। বিগত দিনে প্রতি দুর্গাপূজায় এই মোকাম থেকে বিপুল পরিমাণ ইলিশ ভারতে রপ্তানি করা হলেও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তা বন্ধ ছিল। যদিও এতে কম দামে ইলিশ খেতে পারেননি বরিশালের মানুষ।
স্থানীয় নদীতে ইলিশ মাছ ধরা পড়লেও দাম কমছিলো না তেমন একটা। তবে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভারতে ইলিশ পাঠানোর অনুমতির খবরে বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে পোর্ট রোড মোকাম। স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে মাছ বিক্রিতে আগ্রহ হারিয়ে বিক্রেতারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভারতে রপ্তানির।
ব্যবসায়ীদের দাবি, স্থানীয় পর্যায়ে ইলিশ বিক্রির তুলনায় রপ্তানি অনেকটা সহজ। এক সাথে বেশি বিক্রি করা যায়, তাই ঝামেলাও অনেক কম। সংরক্ষণে খরচও কম। বিগত বছরগুলোতে রপ্তানির পরিমান কোনো নির্ধারিত ছিল না, এবার তা ৩ হাজার টনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই দেশের বিভিন্ন স্থানের রপ্তানিকারকদের সাথে যোগাযোগ করছেন। যারা অনুমতি পাবেন রপ্তানি করার তাদের মাধ্যমে এখন তারা মাছ পাঠানোর পূর্ব প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সূত্র মতে, আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ মাছ রপ্তানির সিদ্ধান্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি-২ শাখা থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করা হয় শনিবার। রপ্তানিকারকদের আবেদনের বিপরীতে নির্ধারিত শর্তাবলি পূরণ সাপেক্ষে তিন হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।
ব্যবসায়ী ইয়ার হোসেন সিকদার বলেন, শনিবার পোর্ট রোড মোকামে প্রায় হাজার মণ ইলিশ মাছ বেঁচা কেনা হয়েছে। শুক্রবার একটু কম এসেছে। তাও প্রায় ৯০০ মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে।
তিনি জানান, কয়েকদিন আগে সাগর উত্তাল ছিলো। তাই জেলেরা সাগরে যেতে পারেনি। সাগরে মাছ না আসায় ও চাহিদা বেশি থাকায় দাম কমেনি। জেলেরা সমুদ্রে মাছ শিকারে গেছে। তারা ফিরে এলে মাছের দাম কমবে বলে আশাবাদ তার।
স্থানীয় বাজারে বিক্রির ব্যয় রপ্তানির তুলনায় বেশি জানিয়ে এই বিক্রেতা বলেন, ভারতে রপ্তানির খবর পেয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রেতাদের আগ্রহ কিছুটা কমেছে। কারণ স্থানীয় বাজারে বিক্রির ব্যয় অনেকটাই বেশি। এখন তারা রপ্তানিকারকদের মাধ্যমে দুর্গাপূজা উপলক্ষে মাছ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শুধু তিনিই নন, মোকামের সকল আড়ৎদার ও কমিশন এজেন্টরাই এই প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
মোকামের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, বর্তমানে মোকামে সিংহভাগ ছোট সাইজের ইলিশ। শনিবার পোর্ট রোড পাইকারি বাজারে দেড় কেজি সাইজের ইলিশ মাছ দুই হাজার থেকে ২২শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এক কেজি ২০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ মাছ প্রতি কেজি এক হাজার ৮শ, এক কেজি সাইজের মাছ এক হাজার ৭শ ও এক কেজির নীচে এলসি সাইজ এক হাজার ৬শ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
অন্যদিকে ভারতে মাছ রপ্তানির খবরে কিছুটা বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে। পোর্ট রোড বাজারে ইলিশ মাছ কিনতে আসা সরকারি কর্মকর্তা জাহিদ হাসান বলেন, চারটি মাছ কিনেছি। সাতশ-আটশ গ্রাম ওজন সাইজের ওই মাছ প্রতি কেজি এক হাজার ৫০০ টাকা দরে ক্রয় করেছি। বর্তমানে ইলিশ মাছের ভরা মৌসুমে মাছের দাম যত কম হওয়ার কথা ছিলো, তা হয়নি। এরমধ্যে ভারতে পাঠানো হলে আর মাছ মিলবেনা স্থানীয় ক্রেতাদের ভাগ্যে। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের বেশি দামে কিনতেও সমস্যা নেই। তবে দাম অব্যাহত থাকলেও মধ্য ও নিম্নবিত্ত মানুষের কপালে ইলিশ জুটবেনা।