চুয়াডাঙ্গায় পবিত্র সীরাতুন্নবী (সা.) ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে মনোমুগ্ধকর ‘তারুণ্যের গান ও নাশিদ সন্ধ্যা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টা থেকে শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত শহরের টাউন ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত এই নাশিদ সন্ধ্যায় হাজারো মানুষ উপস্থিত হন।
জেলার মাদ্রাসা ও কলেজের শিক্ষার্থীরা এ আয়োজন করেন। যেখানে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীদের পরিবেশনায় পুরো অনুষ্ঠানটি সুর ও আধ্যাত্মিকতার এক অনন্য মেলবন্ধন সৃষ্টি করে।
এরআগে বিকেল থেকেই টাউন ফুটবল মাঠে শহর ও আশপাশের এলাকা থেকে শত শত শ্রোতা সমবেত হতে শুরু করেন। এমন এক সুন্দর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আবহে মাঠের আশেপাশের রাস্তাগুলোতে শতাধিক মুখরোচক খাবারের দোকান নিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। এই ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে নাশিদ অনুষ্ঠান উপভোগ করতে আসা দর্শকরা খাবারের স্বাদ গ্রহণের পাশাপাশি সংগীতের সুরেও ভাসলেন।
অনুষ্ঠানে মূল আকর্ষণ ছিল ঢাকার জনপ্রিয় কলরব শিল্পী গোষ্ঠীর পরিবেশনা। মুহাম্মদ বদরুজ্জামান, আবু রায়হান, ইলিয়াস আমিন, ইকবাল মাহমুদ, হুসাইন আদনান, তাওহিদ জামিল, সালমান সাদী, আবির হাসান, ইমানুল ফারহান, তাহসিনুল ইসলাম, শাফিন আহমেদ, আহনাফ খালিদসহ অন্যান্য শিল্পীরা নাশিদ পরিবেশন করে দর্শকদের মন জয় করে নেন। তাদের কণ্ঠের সুর আর গভীর আধ্যাত্মিক গানের মধ্যে উপস্থিত শ্রোতারা যেন মুগ্ধ হয়ে যান।
শুধু এই শিল্পীরাই নয়, চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় ইশারা শিল্পী গোষ্ঠী, সুরের নহর শিল্পী গোষ্ঠী, রাইয়ান শিল্পী গোষ্ঠী এবং হেদায়াহ টিউন স্টুডিওর পরিবেশনায় বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে এক অপরূপ পরিবেশ বিরাজ করে। এই স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোর পরিবেশনায় দর্শকদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো।
নাশিদ পরিবেশনার পাশাপাশি অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃতি করেন অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির কলেজ প্রতিনিধি এস এম জুবায়ের আহমেদ। কবিতা ও নাশিদের ঝঙ্কারে পুরো মাঠ আন্দোলিত হয়। হাজারো দর্শক সুরের মুগ্ধতায় সবাই মোবাইলের ফ্লাশ লাইট জ্বালিয়ে এবং মাথা ঝাঁকিয়ে তাল মেলান। শহর ও আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার দর্শক আনন্দের সঙ্গে নাশিদের মুগ্ধতায় সময় কাটান।
দর্শক শ্রোতাদের মধ্যে এমন এক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা চুয়াডাঙ্গার মানুষদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা ছিল। অনুষ্ঠানটি শেষে দর্শকবৃন্দ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানটির সাফল্য কামনা করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইলিয়াস হোসেন ও সালেকিন আহমেদ শোভন।
অনুষ্ঠানটির বিষয়ে আয়োজক কমিটির কলেজ প্রতিনিধি চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী এস এম জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘দেশ এখন নতুন করে স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করছে। আমাদের লক্ষ্য কেবল রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক মুক্তি নয়, বরং নৈতিক ও সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণও। ইসলামি সংস্কৃতি মানুষকে সুন্দর জীবনযাপন এবং সঠিক মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়। আমাদের চাওয়া হলো, এই সংস্কৃতি সকলের মধ্যে জাগ্রত হোক, যেন আমরা সঠিক পথের দিশা পাই এবং সমাজ থেকে সকল ধরনের অপসংস্কৃতি দূর হোক। ইসলামি সংস্কৃতি আমাদের শেখায় সহনশীলতা, শান্তি এবং মানবতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকের এই নাশিদ সন্ধ্যার মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষের মধ্যে ইসলামি মূল্যবোধ এবং আধ্যাত্মিক চেতনা ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা চাই, তরুণ প্রজন্ম ইসলামি সুর আর সংস্কৃতির মাধ্যমে নিজেদের জীবনকে আরও উন্নত করে তুলুক। এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা দেখাতে চেয়েছি যে, সুন্দর সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে কেবল বিনোদন নয়, আত্মার খোরাকও দিতে পারে। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও অনেক আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের সমাজ আরও উন্নত হবে এবং নৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে।’