উচ্ছেদের মুখে লোপাট দীর্ঘ চার যুগের ব্যবসা

, জাতীয়

রকিব কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 18:34:21

গত তিনদিন ধরে কর্ণফুলী নদীর পাড় জুড়ে সকাল সন্ধ্যা র‌্যাব-পুলিশের সরব উপস্থিতি রীতিমতো ভয় ধরিয়ে দেয় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনাকারীদের। অভিযানের পূর্বে দীর্ঘ চার যুগের বেশি সময় ধরে চলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের দেখা নেয়। অনেকে অভিযানের সময়ে মালামাল সরানোর আরজি করেছেন কর্তৃপক্ষের কাছে।

কাঁচাঘর থেকে বহুতল ভবনের মুখে উচ্ছেদের তৃতীয় দিনে গুড়িয়ে দেওয়া হয় রাস্তার পাশ ঘেঁষে ওঠা দোকানপাট আর ওয়ার্কশপ। মাঝিরঘাট লোহার গেইট নামক ওই স্থানে বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয় দোকানপাট, লবণের গুদাম, ভাত ঘর, ওয়ার্কশপ। রাস্তার দুপাশে ভিড় করতে থাকে স্থানীয়রা। ফলে কিছু সময়ের জন্য ওই রুটে সৃষ্টি হয় যানজট।

তিলে-তিলে গড়ে ওঠা ওয়ার্কশপ আর লবণের গুদামে বুলডোজারের আঘাত যেন হৃদয়ে ক্ষতের সৃষ্টি করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রুহুল আমিনের। মালামাল যততত্র এদিক-সেদিক পড়ে থাকতে দেখে লুকিয়ে আর আড়ালে কান্না করেছেন। এ সময় আশেপাশের অনেকে তার কান্না দেখে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

প্রায় ১৪ বছরের বেশি সময়ে লবণের গুদামের কর্মরত শ্রমিক মো.ফিরোজ বার্তা২৪.কম-কে জানান, আমরা মনে করেছিলাম এই জায়গার মালিক ডায়মন্ড সিমেন্টের মো. হাবিব সাহেব। এখন শুনতেছি এইডা নাকি সরকারের জমি। জায়গায় মালিকের কেউ মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা কিংবা যোগাযোগ করেনি বলেও জানান ফিরোজ।

এ সময় কথা হয় রুহুল আমিনের সাথে। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'মাসে ৪০হাজার টাকা ভাড়ার বিনিময়ে গত চার বছর আগে ওয়ার্কশপ আর লবণ গুদামটি ভাড়া নেন। ব্যবসায় দাঁড় করানোর জন্য পুঁজির জন্য একতা সমিতি নামে এক প্রতিষ্ঠান থেকে আড়াই লক্ষ টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। সময়ের সাথে বেড়ে যায় ব্যবসার পরিধি।'

অভিযানের পরেও মালামাল না সরানোয় ওয়ার্কশপের ভেতরে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়। সবমিলিয়ে ১০লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতির কথা জানান তিনি।

তিনি আক্ষেপ করেন এত অল্প সময়ে আর মালিকের নির্দেশনার অভাবে আজ এত বড়সড় ক্ষতি হয়ে গেলো। কথার বলার মাঝে কান্না চেপে রাখলেও, তার চোখে-মুখে ফুটে ওঠেছে সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার আর্তনাদ।

এদিকে বিকেল পাঁচটায় তৃতীয় দিনের অভিযান শেষে পতেঙ্গা রেঞ্জের সহকারী ভূমি কমিশনার (এসিল্যান্ড) ও উচ্ছেদ কার্যক্রমের সমন্বয়ক তাহমিলুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, অভিযানে সকলের সহায়তায় আজ সর্বমোট ১৪০টি স্থাপনা অপসারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকে আমাদের কাছে সময় স্থাপনা ও মালামাল সরিয়ে নেয়ার জন্য সময় চেয়েছেন। আমরা বিষয়গুলো ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। এখনও এখন পর্যন্ত কোনো নেতিবাচক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি। যথারীতি (৭ জানুয়ারি) বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অভিযান শুরু হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর