‘কয়েকদিন ধরে কাজ নেই, খুব কষ্টে আছি’

, জাতীয়

মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা | 2024-09-27 12:29:20

‘টানা বৃষ্টিতে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে জল। কয়েকদিন ধরে কাজকাম নেই, খুবই কষ্টে দিন পার করছি। তার মধ্যে সবাই শুধু আমাদের ছবি তুলে নিয়ে যায় কিন্তু ১০টা টাকা কেউ দিয়ে সাহায্য করে না।’ আক্ষেপ করে কথা গুলো বলছিলেন সুনীল দাশ।

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে সাতক্ষীর শহরের পাকাপোল মোড় এলাকায় কথা হয় সুনীল দাশের সঙ্গে। কাটিয়ার দাশ পাড়ায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সংসার তার।

সুনীল বলেন, ‘এই সময়টা গ্রামে কাজকাম থাকে না। তাই শহরে ছুটে যায় মানুষ। প্রতিদিন কাম পাওয়া যায় না। বাসাবাড়ির বিল্ডিংয়ের কাজ আগের থেকে অনেক কম। সব কিছুর দাম বাড়লেও আমাদের মজুরি বাড়েনি। আর এখন কাজ পাওয়াটাও অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ সব জায়পায় জল উঠেছে। কেউ কাজে নিতে পারছেন না।


এদিকে তার পাশে চিন্তামগ্ন অবস্থায় বসে আছেন দিনমজুর কানু লাল। থাকেন পুরাতন সাতক্ষীরার ঘোষপাড়ায়। কাজে যেতে না পেরে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন তিনি। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, সামনে পূজা। আর কয়েক দিন বাকি আছে। ছেলে মেয়ের নতুন পোশাক কিনে দিতে হবে। প্রতিদিন বাড়ি গেলেই তারা নতুন পোশাকের বায়না ধরে। আমি বাবা হয়ে কতটা অসহায় ছেলে মেয়েদের আবদার পূরণ করতে পারছি না। এই দুই দিনে একটা কাজও করতে পারলাম না।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন বাড়ি থেকে কোদাল ঝুড়ি নিয়ে বের হলেও কাজ না পেয়ে আবার বাড়ি ফিরে যেতে হয়। কাজ না পেলে বাড়ি যেতেও মন চাই না । সবাই আমার কাজের আয়ে চলে।  কিভাবে সংসার চালাবো। এই চিন্তায় আর ভালো লাগছে না।

এনামুল হকের বাড়ি মুন্সিপাড়ায়। সুইপারের কাজ করে তিনি সংসার চালান। দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী। এনামুলও প্রতিদিন সাতক্ষীরার পাকাপোল মোড়ে শ্রমের হাটে আসেন কাজের সন্ধানে। তিনি বলেন, ‘গত দুই দিনে বৃষ্টির জন্য কাজ জোটেনি। আজ বৃষ্টি নেই তাই কাজের সন্ধানে বসে আছি। দেখি কেউ নিয়ে যায় কিনা। এই দুদিন খুব কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছি। 


এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে অতি বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে। দুর্ভোগে রয়েছে সাতক্ষীরার মানুষ। বন্যার পানিতে রোপা আমন, আউশ ও বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যায়। একই সঙ্গে ভেসে গেছে ছয় হাজার মৎস্যঘের ও দেড় হাজার পুকুর। ফলে মৎস্য ও কৃষি খাতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি। নিঃশ্ব হয়ে পড়েছে এই এলাকার মানুষ। নেই কোনো আয়। পাচ্ছে না কোনো সুযোগ সুবিধা। অবসর সময় পার করছেন মানুষগুলো। ফসলি জমি ও বসতবাড়ি বিলীন হয়ে অনেক কৃষক নিঃস্ব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর