বৃষ্টির অজুহাতে চড়া সবজি বাজার

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2024-09-28 14:41:44

চলমান বৃষ্টির প্রভাবে রাজশাহীর বাজারে সবজির দাম হু হু করে বেড়েছে। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে মাঠ থেকে সবজি সংগ্রহ করতে না পারায় বাজারে সরবরাহ কমেছে, আর এর সুযোগে ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়েছেন সবজির দাম।

পেঁপে, লাউ, বেগুন, শিম, ঢেঁড়সসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সবজির দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়েছে। একই সঙ্গে, ইলিশের মৌসুমেও জেলের জালে ধরা পড়ছে না পর্যাপ্ত ইলিশ, ফলে মাছের বাজারেও সংকট তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, বৃষ্টির কারণে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে, ফলে বাজারে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা বৃষ্টির অজুহাত দেখিয়ে অতিরিক্ত লাভের আশায় দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। দেখা যায়, পেঁপে, লাউ, বেগুন, শিম, ঢেঁড়সসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

বাজারে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে, যেখানে কিছুদিন আগেও এর দাম ছিল ১৭০ টাকা কেজি। দেশি পেঁয়াজের দাম ১১৫ টাকা কেজি, যা কয়েকদিন আগেও ছিল ১০০ টাকা। আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি দরে। এমনকি, প্রতিটি সবজির দামই কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা করে বেড়েছে বলে জানা গেছে।

সবজির বাজারে শিম, গাজর ও টমেটোর দামও উর্ধ্বমুখী। গাজর বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি, টমেটো ১৬০ টাকা কেজি এবং শিম ১০০ টাকা কেজি দরে। বেগুনের কেজি ৬০ টাকা, করলা ৫০ টাকা, পটল, ঢেঁড়স, ঝিঙা ৪০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, বরবটি ও কচুর মুখি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা কেজিতে। লাউ ৪০ টাকা, চালকুমড়া ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা, এবং অন্যান্য সবজি যেমন চিচিঙ্গা, ঢেঁড়স, পুঁইশাক ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। লাল শাকের দামও ৬০ টাকা কেজি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টির কারণে পরিবহন ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে এবং মাঠ থেকে সবজি সংগ্রহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। তাই সবজির সরবরাহ কমে গেছে, যা বাজারে এই মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ। তবে, ক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির অজুহাত দিয়ে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছাকৃতভাবে দাম বাড়াচ্ছেন। ক্রেতারা সরকারের প্রতি বাজারের উপর নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।

মুরগির বাজারেও দাম বেড়েছে। এদিন ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৫০ টাকা, এবং দেশি মুরগির কেজি ৫০০-৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া পাতিহাঁস বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকা কেজিতে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১,০৫০ থেকে ১,১০০ টাকা কেজিতে।

মুরগির বাজারে সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে জানতে চাইলে সাহেববাজারের তুজিন আলী নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, "বৃষ্টির কারণে আমাদের মুরগির সরবরাহ কমে গেছে। খামারিদের থেকে নিয়মিত মুরগি পাচ্ছি না, আর এ কারণেই দাম বেড়েছে। সোনালি, ব্রয়লার, দেশি সব ধরনের মুরগির দামই এখন চড়া। সরবরাহ বাড়লে দাম আবার কমতে পারে, তবে পরিস্থিতি কিছুটা সময় নেবে।"

ডিমের বাজারেও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা হালি এবং লাল ডিম ৫২ টাকা হালি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ডিমের বাজারে মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে ডিম ব্যবসায়ী মো. শাহীন আলম বলেন, মুরগির পাশাপাশি ডিমের দামও বেড়েছে। সরবরাহ সংকট ও উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় সাদা ডিম এখন ৫০ টাকা হালি এবং লাল ডিম ৫৪ টাকা হালি দরে বিক্রি হচ্ছে। খামারিরা বাড়তি খরচের কারণে দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। আগামী দিনগুলোতে এই পরিস্থিতি আরও কিছুদিন থাকতে পারে, যদি সরবরাহে উন্নতি না হয়।

মাছের বাজারেও তেমন কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছে না, বিশেষ করে ইলিশের সরবরাহ অত্যন্ত কম। বাজারে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১,১০০ টাকা, ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১,৫০০ টাকা এবং এক কেজি আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১,৬০০ টাকা কেজি দরে। ইলিশ বিক্রেতা মামুন জানান, কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা দাম বেড়েছে। ইলিশের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে এটির দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অন্য মাছের বাজারে রুই ও কাতলা মাছ আকার ভেদে ৩০০-৬৫০ টাকা কেজি, চিংড়ি মাছ ৫০০-১,৪০০ টাকা কেজি, ট্যাংরা ৬০০-১,২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। কাচকি, মলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৭০০ টাকা কেজি দরে, তেলাপিয়া ১৮০-২৫০ টাকা, শিং মাছ ৫০০-৭০০ টাকা, মাগুর ৬০০ টাকা, কই মাছ ৪০০-৬০০ টাকা এবং পাবদা মাছ বিক্রি হয়েছে ৪০০-৫০০ টাকা কেজিতে। সিলভার মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা এবং পাঙ্গাস মাছ ৩০০ টাকা কেজি দরে।

মাছের বাজারের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে রাজশাহীর সাহেববাজারের মাছ ব্যবসায়ী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর ইলিশের সরবরাহ খুবই কম। বৃষ্টি ও নদীতে পানির অবস্থা ভালো না থাকায় জেলেরা ইলিশ ধরতে পারছে না। তাই বাজারে ইলিশের সংকট রয়েছে। অন্য মাছের চাহিদাও বেড়ে গেছে, ফলে রুই, কাতলা, পাঙ্গাসের মতো মাছের দামও বাড়তি। সরবরাহ বাড়লে হয়তো দাম কিছুটা কমবে, কিন্তু আপাতত এই পরিস্থিতি বজায় থাকবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর