'ইফসুফের ঝাল-টক আচার, কারে দিমু কয় টেকার'

ময়মনসিংহ, জাতীয়

রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, গৌরীপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-29 14:59:11

'ইফসুফের ঝাল-টক আচার, কারে দিমু কয় টেকার। গাড়ি লইয়্যা আইছি কইলাম, থাকতাম না বেশিক্ষণ। খাইলে চাটবেন, না খাইলে পস্তাইবেন। ইফসুফের ঝাল-টক আচার।'

আঞ্চলিক ভাষার এই কথার ছন্দগুলো মুখে বলতে বলতে ভ্যান গাড়ি নিয়ে ধীর গতিতে ছুটে চলছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। কেউ আচার কেনার জন্য ডাক দিলে গাড়ি নিয়ে থামছেন তিনি। তারপর আচার বিক্রি করে আবারও গাড়ি নিয়ে ছুটে চলছেন।

বৃহস্পতিবার ৯৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের হাতেম আলী সড়কে এই দৃশ্য ধরা পড়ে। কাছে গিয়ে কথা হয় ইউসুফ আলীর সাথে। আচার খেতে খেতে কিছুক্ষণ গল্পও হয় ইউসুফের।

বার্তা২৪.কম-কে তিনি বলেন, 'অভাবের লেইগ্যা ইশকুলে ভর্তি হইতে পারি নাই। পেটের দায়ে মাইনষ্যের ছোটো-খাডো কাইজ করতাম। একদিন আব্বায় কইলো আমার লগে থাইক্যা আচারের বানানি আর ব্যবসাডা শিখ। জীবনে ঠেকবি না। তহন আব্বার লগে থাইক্যা আচার বানানি শিহার লগে লগে শহর-গেরাম ঘুইরা ঘুইর‌্যা আচার বেচা শুরু করি। হেরপর তো এই ব্যবসাতেই গেছেগা চল্লিশ বৎস্যর।'

ইউসুফের বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। দাম্পত্য জীবনে তার স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে বড় মেয়ে হালিমার বিয়ে হয়ে গেছে, ছোট মেয়ে আকলিমা মাদরাসায় পড়েন। তিন ছেলের মধ্যে দুই ছেলে আমিরুল ও মোশারফ ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করে, ছোট ছেলে তামিম দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

প্রতিদিন ভ্যান গাড়িতে আচারের পসরা সাজিয়ে পৌর শহর ও ইউনিয়ন ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন। তার এখানে আম, চালতা, তেঁতুল, আমড়া, বড়ই, আমলকী, জলপাই, করমচা, কামরাঙ্গা ফল সহ হরেক রকমের ঝাল-টক পাওয়া যায়। আচার প্রেমীরা ৫ থেকে ১০ টাকায় তার আচার কিনে খান। দিন শেষে তার আয় হয় ১২শ থেকে ১৫শ টাকা।

এক সময় অভাব-অনটনে জীবনযাপন করলেও আচারের ব্যবসায় এসে স্বাবলম্বী হয়েছেন ইউসুফ। বাড়িতে টিনশেড ঘর তোলার পাশাপাশি একখণ্ড জমিও কিনেছেন। তবে লেখাপড়া করতে না পারার বিষয়টি তার মনে এখনো কষ্ট দেয়।

বার্তা২৪.কম-কে ইউসুফ আলী বলেন, 'আমি আচারের মইধ্যে স্যাগারিন ও রং দেই না। পয়-পরিষ্কার কইর‌্যা আচার বানাই। তাই আমার আচারের স্বাদই অন্যরহম। তয় অহন বয়স হইছে। শইলডা আগের মতো চলেনা। তাই বেচা-কিনা ঠিকঠাক করতারি না।'

এরই মাঝে বিকেলের সূর্য পশ্চিমে হেলেছে। ম্লান হতে শুরু করেছে রোদের তীব্রতা। এমন সময় ইউসুফের গাড়ির সামনে আচার খেতে আসলেন কয়েকজন যুবক। তাদেরই একজন তাসাদদুল করিম । চালতার আচার খেতে খেতে তিনি বলেন, 'স্কুলে পড়ার সময় থেকেই দেখছি ইউসুফ ভাই আচার বিক্রি করেন। বাজারের অনেক আচার বিক্রেতা আছেন, কিন্তু ইউসুফ ভাইয়ের আচারের আলাদা একটা সুনাম আছে।'

তাসাদদুলের কথার রেশ টেনে ইউসুফ বলেন, 'ভাই আচারের সুনাম থাকলে কি অইবো, আমি যে লেহাপড়া জানি না, এইডাতো একটা দুর্নাম। এই যে সাংবাদিক ভাই আমার কথা-বার্তা লেইখ্যা নিতাছে। এইডা ছাপা হইলে আমি পড়মু কেমনে?।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর