অর্থাভাবে বন্ধ দেশের প্রথম শহীদ মিনার পুনঃনির্মাণ কাজ

রাজশাহী, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, রাজশাহী, বার্তা২৪ | 2023-08-24 10:42:25

অর্থ বরাদ্দের অভাবে প্রায় তিন বছর ধরে থমকে আছে দেশের প্রথম শহীদ মিনারের পুনঃনির্মাণ কাজ। রাজশাহী কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাস চত্বরে প্রথম শহীদ মিনারের স্থানে নতুন নকশা অনুযায়ী এটি নির্মিত হওয়ার কথা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫২ ফিট উচ্চতার শহীদ মিনার নির্মাণের কথা ছিল রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক)। এজন্য ৫০ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ দেন রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। তবে শেষ পর্যন্ত অর্থ ছাড় না পাওয়ায় স্মৃতির মিনার নির্মাণে হাত দিতে পারেনি রাসিক।

জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কলেজের অধ্যক্ষ মহা. হবিবুর রহমানের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বরাদ্দের চিঠি তুলে দেন এমপি। অবকাঠামো উন্নয়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এ অর্থ বরাদ্দ হয়। তবে শেষ পর্যন্ত অর্থ ছাড় না পাওয়ায় শহীদর মিনার পুনঃনির্মাণ কাজ শুর করতে পারেনি রাসিক।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, সংসদ সদস্য যে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছিলেন, সেটি ছিল ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন খাতের জন্য। ফলে শহীদ মিনার নির্মাণে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় দেয়নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

একই কথা জানালেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ হবিবুর রহমানও। রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ বলছেন, শহীদ মিনার নির্মাণের দায়িত্ব সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের। সেই চেষ্টা চলছে। সংসদ সদস্য এখনও এটি নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ আনার চেষ্টা করছেন। আশা করি- শিগগিরই বিষয়টি সুরাহা হবে।

সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা জানান, ভাষা আন্দোলনের প্রতি অকৃত্রিম, গভীর শ্রদ্ধা থেকেই ওই স্থানে প্রথম শহীদ মিনারের আদলে দৃষ্টিনন্দন শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলনের অবদানকে স্বীকৃতি দিতেই এ উদ্যোগ। এখনও তিনি এ কাজের অর্থ বরাদ্দের চেষ্টা করছেন।

রাজশাহী কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও রাবির দর্শন বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক জানান, ৫২’র ভাষা আন্দোলন ও ৭১’র মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির সব গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসেই রাজশাহী কলেজের নাম জড়িয়ে রয়েছে। বায়ান্নের আগে থেকেই রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সোচ্চার ছিলেন রাজশাহী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা। ঢাকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে তাল রেখে বৃহৎবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী এ কলেজ থেকেই রাজশাহীর ভাষা আন্দোলন পরিচালিত হতো।

ভাষাসৈনিক মোশারফ হোসেন আখুঞ্জি জানান, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরতদের ওপর ঢাকায় নির্বিচারে গুলি ছোঁড়া হয়েছে, এমন খবর ওইদিন সন্ধ্যায় রাজশাহীতে পৌঁছে। রাজশাহীর মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীদের টেলিফোনে খবরটি আসার পর তা দ্রুত শহরময় ছড়িয়ে পড়ে। ভাষার দাবিতে আন্দোলনকারীদের বুকে গুলি চালানোর খবরে সোচ্চার হয়ে ওঠেন রাজশাহীর ছাত্র-জনতা।

ওই রাতেই রাজশাহী কলেজের এ ব্লক ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী গোলাম আরিফ টিপুর কক্ষে সভা হয়। সেই সভায় সিদ্ধান্ত হয় শহীদদের সম্মানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। কিন্তু তখনকার দিনে শহীদ মিনার বা স্মৃতিস্তম্ভ সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না কারও। তারপরও রাত সাড়ে ৯টায় শুরু হলো নির্মাণকাজ।

পাশেই ছিল হোস্টেল নির্মাণের জন্য ইটকাঠ। সেই ইটকাঠের সঙ্গে কাদামাটি মিশিয়ে রাত ১২টার মধ্যে নির্মিত হলো দেশের প্রথম শহীদ মিনার। মাটিতে কালি দিয়ে দিয়ে লিখে দেয়া হলো ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসের প্রধান ফটকের পাশে দেশের প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল। পরে সেটি তৎকালীন পুলিশ বাহিনী গুঁড়িয়ে দেয়। এটিই বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার, যা ঐতিহাসিকভাবে সত্য বলে তাঁর দাবি।

রাজশাহী কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওলিউর রহমান বলেন, আজো স্বীকৃতি মেলেনি রাজশাহী কলেজে নির্মিত দেশের প্রথম এ শহীদ মিনারটির। কোনো রকমে এতদিন ধরে রাখা হয়েছে এ স্মৃতিস্তম্ভ। এটির পুনর্নির্মাণ ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি রাজশাহীর গণমানুষের প্রাণের দাবি।

স্মৃতিস্তম্ভটির রাষ্ট্রীয় স্বাকৃতি আদলে শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে রাজশাহী কলেজে শুরু হয়েছে অনলাইন ভোটিং কার্যক্রম। বেলা সাড়ে ১০টায় কলেজের অধ্যক্ষ মহা. হবিবুর রহমান কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। অনলাইন ভোটিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি।

রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি বাবর মাহমুদ বলেন, দেশ-বিদেশের যেকোনো স্থান থেকে অনলাইনে এ দাবির পক্ষে ভোট দিতে পারবেন মানুষ। ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে ভোটিং চলার পর তা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পৌঁছে দেয়া হবে। দাবির পক্ষে দালিলিক প্রমাণও জমা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর