ছেঁউড়িয়ায় ভাঙলো সাধুর হাট

, জাতীয়

এসএম জামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া | 2024-10-20 08:48:03

বাউল ফকির সম্রাট লালন শাহের ১৩৪ তম তিরোধান দিবসের তিনদিনের অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়েছে। এরইমধ্য দিয়ে ভাঙলো সাধুর হাট। কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার ছেউঁড়িয়া লালন আখড়ায় লাখো জনতার ঢলে মুখরিত লালন আখড়ায় বেজে উঠেছে বিদায়ের সুর।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে বাউল-সাধুরা ফিরে গেছেন নিজ নিজ আশ্রমে। ভাব জগতের মরমী গান, ভাবের আদান-প্রদান, গুরু ভক্তি, সাধুসঙ্গ ও জমকালো সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে তিনদিনের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ।

কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোছা. শারমিন আখতারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা রেঞ্জের পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্র, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান,বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) ৪৭-ব্যাটালিয়ন কুষ্টিয়ার অধিনায়ক মো. মাহবুব মোর্শেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, ছাত্র-জনতা প্রতিনিধি মোজাক্কির রহমান রাব্বি ও মো. সাজেদুর রহমান। প্রধান আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক অ্যাডভোকেট লালিম হক।

বক্তারা বলেন, লালনের ফকিরের আধ্যাত্মিকতা ও দর্শন নিয়ে দেশ-বিদেশে গবেষণা হচ্ছে। ফকির লালন ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ। আত্মপরিচয়ে তিনি ছিলেন নীরব। লালনের প্রধান কীর্তি হচ্ছে তার গানের কথা ও সুর। তিনি জাত-পাতের ঊর্ধ্বে গানের মাধ্যমে মানব প্রেম ও মানবতার জয়গান গেয়ে গেছেন। সমাজের সকল অনাচার ও বৈষম্য দূরীকরণে লালনের অহিংস বানী ছড়িয়ে দেওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা।

নবীন-প্রবীণ বাউল শিল্পীদের পরিবেশনায় লালনের অসংখ্য হৃদয়গ্রাহী ও মনোমুগ্ধকর গান রাতভর পরিবেশিত হয়। এছাড়া মরা কালি নদীর পাড়ে বাউলদের খন্ড গানের জলসা দর্শক-শ্রোতারা ঘুরে ঘুরে উপভোগ করেন।

এর আগে প্রায় সাত হাজার বাউল ফকিরকে রাতের খাবার খিচুড়ি (অধিবাস) সকালের নাস্তা (বাল্যসেবা) পায়েস ও মুড়ি এবং দুপুরের খাবার (পূন্যসেবা) সাদা ভাত, ডাল ও সবজি খাবার দেওয়া হয়। পরে দধি দিয়ে মিষ্টিমুখ করানো হয় বাউল ও অতিথিদের।

আঁখড়া বাড়িতে তিন বেলার খাবার গ্রহন বাউল-সাধুদের আচার অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষন ও পরমাত্মার পরম শান্তির অনন্য পরশ। তবে ১৮ অক্টোবর দুপুরে পূণ্যসেবা গ্রহণের পরই বাউলদের অধিকাংশ মাজার ত্যাগ করেন।

লালন একাডেমির সদস্য আবদুল কুদ্দুস বলেন, কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালনের আখড়াবাড়িতে এমন জনসমাগম অন্তত গেল ৩০ বছরে হয়নি। বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। তবে লালন অনুসারীর পাচাপাশি লালন দর্শনে বিশ্বাসী হয়ে দর্শনার্থীদের সমাগম ছিল বরাবরের মতোই।

তবে আখড়াবাড়িতে প্রকৃত লালন ভক্ত ও সাধুরা অনেকটাই অতিথির মতো বছরের দুটি আয়োজনে আসে, যা লালনের জন্ম উৎসব ও মৃত্যুবার্ষিকী। প্রচুর দর্শনার্থীর ঢলে কোণঠাসা লালন ভক্ত অনুসারীরা। এখন অবস্থা এমন যে, যেসব লালন ভক্তরা প্রকৃৃত সাধনা করেন, তারা বারামখানায় আসেন একটি রাত বা লগ্ন কাটিয়ে চলে যান।

মেহেরপুর থেকে আসা বাউল ফকির জসিম উদ্দীন জানান, লালনের মৃত্যুবার্ষিকী ও দোল পূর্ণিমার তিথিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাঁইজির মাজারে ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য মনের টানে ছুটে আসেন লালন আখড়ায়। ফকির লালনের দর্শন ও তার নির্দেশিত পথ অনুসরণের মাধ্যমে আত্মার প্রশান্তি লাভ করা সম্ভব বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, ১২৯৭ বঙ্গাব্দের ১ কার্তিক আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের মৃত্যুর পর থেকে প্রতিবছর এ স্মরণোৎসব পালন করে আসছেন তার অনুসারীরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর