দেশজুড়ে প্রতিনিয়িত বাড়ছে ডেঙ্গু সংক্রমণ। বর্ষাকালে ডেঙ্গু সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলেও এবার চলতি নভেম্বরেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে গত ২৪ ঘণ্টায়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০ জন। তবে এই আসছে শীতে এই সংক্রমণ কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার।
সাধারণত বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেলেও চলতি বছরে দেখা দিয়েছে ভিন্নতা। বর্ষার মৌসুম শেষ হয়ে শীত আগমনের দাড় প্রান্তে দাড়িয়েও নতুনকরে চোখ রাঙ্গাচ্ছে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু।
রোববার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে শতাধিক ডেঙ্গু রোগীদের আর্তনাদ।
হাসপাতলের তথ্যমতে, চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম তিন দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শুধু সোহরাওয়ার্দী হাসাপাতালেই ভর্তি হয়েছেন ৪১ জন। তবে এই হাসপাতলে গত তিনদিনে কোনো রোগী মারা যায় নি। এছাড়া, চলতি বছর এপর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ১২৫৮ জন। এপর্যন্ত সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন ১১৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এখনও পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন মোট ১২০ জন।
এদিকে ডেঙ্গুর এই প্রাদুর্ভাব রোধে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে দুই সিটি করপোরেশন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মীর খাইরুল আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের কার্যক্রম চলছে। আমরা নিয়মিত যেগুলো কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। তার মধ্যে ফগিং, লার্ভা নির্মূল, অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এখন যেহেতু বর্ষা উত্তীর্ণ হয়েছে সেহেতু একটু মশা থাকবে। এর পরে সানলাইট থাকলে এগুলো ধীরে ধীরে ন্যচারালি উৎপত্তিস্থলগুলো কমে আসবে এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমে যাবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে চলতি বছরে একদম জানুয়ারি মাস থেকে কাজ শুরু করেছি। আমাদের বিভিন্ন এলাকায় জনসচেতনতামূলক কাজ চলছে। আমরা গত দুই তিন মাস বিশেষ করে যেটা করছি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের সংযুক্ত করছি। তাদের দিয়ে জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। মাইকিং ও র্যালী করা হয়েছে। আমাদের মশক নিধন যে তৎপরতা যেসব এলাকায় রোগী কিছুটা বেশি পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই আমরা চিরুনি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সকল ধরনের তৎপরতা চলছে। আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে গিয়ে ঢাকার সমস্ত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, থানা সব পরিষ্কার করে দিয়ে আসছি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভুল তথ্য দিচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রথমত আপনারা ঢাকা দক্ষিণের যে রোগী এবং মৃত্যুর পরিসংখ্যান পাচ্ছেন সেটা সম্পূর্ণ ভুল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রিপোর্টটা হাসপাতাল কেন্দ্রিক। ঢাকা মেডিকেল, সলিমুল্লাহ মেডিকেল, মুগদা হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি, পিজি হাসপাতাল অবস্থিত। সারা দেশ থেকে এসব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীরা এসব হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসে। স্বাস্থ্য অধিদফতর যেটা করে এসব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সমস্ত রোগীকে তারা দক্ষিণ সিটির রোগী হিসেবে রিপোর্ট করে। কিন্তু এটাতো সঠিক রিপোর্ট হলো না। আবার মৃত্যু দেখেন গতকাল তারা মৃত্যু দেখিয়েছে ১০ জন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণে মৃত্যু দেখিয়েছে ৪ জন। আমি পুরো মৃত্যুর তালিকা খুজে দেখলাম দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বাসীন্দা এমন মৃত্যু হয়েছে একজনের।
একই ভাবে এই বছরে তারা ঢাকা দক্ষিণে মৃত্যু দেখিয়েছে ১০০ জনেরও বেশি। কিন্তু আমরা একদম প্রতিটা রোগীর ঠিকানা, কোথা থেকে আক্রান্ত হয়েছে সব এনালাইসিস করে দেখেছি দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বাসীন্দার মৃত্যুর সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৩২ জন। এই যে স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রতিদিন একটা ভুল তথ্য হাজির করছে এটা দুঃখজনক।
এদিকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের এসব কার্যক্রমে পাশাপাশি আরও বেশ কিছু কার্যক্রম চালানোর পরামর্শ কীটতত্ত্ববিদের।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বার্তা২৪.কমকে বলেন, এই মূহুর্তে সিটি করপোরেশনের উচিত ডেঙ্গুর হটস্পট গুলো চিহ্নিত করা। এরপর যেসব বাড়িতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আছেন সেসব বাড়ির মশাগুলো নিধন করা। এছাড়া যেসব স্থানে পানি জমে আছে সেসব জমা পানি ফেলে দিতে হবে। তাছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে সর্বপ্রথম মশারীর মধ্যে থাকা নিশ্চিত করতে হবে।
কবিরুল বাশার আরও বলেন, এই নভেম্বর মাস জুড়েই মোটামুটি ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থাকবে। তারপর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমে আসবে। আমাদের দুই সিটি করপোরেশন থেকে এডিস লার্ভা নির্মূলে বিশেষ ভাবে নজরদারি করতে হবে।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৬৩ হাজার ১৬৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৩১০ জনের। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন।