প্রায় ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বঙ্গোবসাগরের নাফ নদীর মোহনায় মাছ শিকারে সময় অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ জেলেকে ছেড়ে দেয়নি মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।
তবে তাদের ফেরত আনার বিষয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে বিজিবি। এছাড়া এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানানো হয়েছে বিজিবির পক্ষ থেকে। তার আগে সোমবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের অদূরে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে ১৫টি নৌকা-জালসহ তাদের ধরে নিয়ে যায়। এতে একদিন পর জেলেদের ফেরত না দেওয়ায় পরিবার আতঙ্কের মধ্য রয়েছে।
জানতে চাইলে টেকনাফ ২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিইদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘মিয়ানমারের ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের ফেরত আনার বিষয়ে কাজ চলছে। দুই-এক দিনের মধ্য জেলেদের ফেরত আনা সম্ভব। এছাড়া জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে নৌকার মালিক টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, ‘ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের এখনো মিয়ানমার সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ফেরত দেয়নি। ফলে পরিবারের মাঝে ভয়ভীতি কাজ করছে।’
ধরে নেওয়া জেলেরা সবাই টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা। এরা হলেন, মৃত সোলতান আহমেদের ছেলে মো. হাসিম (৩০), মোহাম্মদ আলমের ছেলে মো. হোছেন (২০), ইলিয়াসের ছেলে মহি উদ্দিন (২২), মো. ইউনুছের ছেলে এনায়েত উল্লাহ (৩২), হাসান শরীফের ছেলে আব্দুল শুক্কুর (৩৫), মৃত মোহাম্মদ ইউনুছের ছেলে নুর হাফেজ (২২), মৃদ মছন আলীর ছেলে মো. ইয়াছিন (৩০), আমির সাদুর ছেলে আবদুর রহিম (২৪), মৃত বাঁচা মিয়ার ছেলে হাসান আলি (৩৩), আবদুস শুক্কুরের ছেলে ওসমান গনি (৩০), আলি আহমদের ছেলে শাহ আলম (২২), শফি উল্লাহর ছেলে আসমত উল্লাহ (২০), নুরুল আলমের ছেলে আব্দুল শুক্কুর (২৬), মৃত নজু মিয়ার ছেলে আবুল হোছেন (১৭), মৃত নজির হোসেনের ছেলে আয়ুব খান (৩০), মৃত মোহাম্মদ ইউসুফের ছেলে নুর হোছন (২২), মৃত বশির আহমেদের ছেলে মো. বেলাল (১৮), মৃত নুর আমিনের ছেলে সলিম (২৭), মৃত জাকারিয়ার ছেলে আবদুল কাদের (২২) ও নাছির উদ্দিনের ছেলে ইবনে আমিন (৩৫)।
আটক জেলে ইবনে আমিনের বাবা নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের পরিবারের এক মাত্র আয়ের উৎস ছিল ছেলে। এখন তাকে ধরে নিয়ে গেছে। আমরা খুব চিন্তিত আছি। কারণ এর আগে মিয়ানমার নৌবাহিনীর গুলিতে আমাদের জেলের মৃত্যু হয়েছে।’
স্থানীয় জেলে নুর আলম বলেন, ‘জেলেরা খুব ভয়ের মধ্য আছেন। কেননা বারবার জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাই মাছ শিকারে যাওয়া জেলেরা খুব ভয়ে আছেন। তাছাড়া গতকাল ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের ছেড়ে দেয়নি। যার কারণে জেলে পরিবারের মাঝে দুঃচিন্তায় আছেন।’
জেলেদের ফেরতে আনতে বিজিবি মিয়ানমার সাথে যোগাযোগ করছে উল্লেখ করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘জেলেদের ভুলের কারণে বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ থাকলেও জেলেরা তা অমান্য করে মাছ শিকারে যাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা রোধে আমরা জেলেদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করছি।’