মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার চাঞ্চল্যকর রুবেল (৩৬) ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটনপূর্বক হত্যাকান্ডের মূলহোতা মোঃ বিজয় (১৯) ও তার সহযোগী মোছাঃ শ্রাবনী আক্তার (১৮) কে গ্রেফতার করেছে মানিকগঞ্জ র্যাব-৪, সিপিসি-৩ এর একটি টিম।
শনিবার (৯ নভেম্বর) ভোরে প্রেস বিজ্ঞপ্তি'র মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাব ৪, সিপিসি ৩ এর কোম্পানি কমান্ডার লেঃ কমান্ডার মোঃ আরিফ হোসেন জানান সিংগাইরের ধলেশ্বরী নদী থেকে রুবেলের মরদেহ উদ্ধারের মাত্র ০৬ ঘন্টার মধ্যেই তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
রুবেল হত্যাকান্ডে গ্রেফতার হওয়া বিজয় সিংগাইর উপজেলার ফোর্ডনগর এলাকার আঃ সালামের ছেলে এবং শ্রাবণী আক্তার একই এলাকার আল আমিনের স্ত্রী এবং বিজয়ের প্রেমিকা।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি'তে তিনি উল্লেখ করেন, রুবেল হত্যাকান্ডে গ্রেফতার শ্রাবনী আক্তার সম্পর্কে ভিকটিমের প্রতিবেশী ভাতিজি। ধলেশ্বরী নদীর খেয়া পারাপার এর সময় বিজয়ের সাথে শ্রাবনী আক্তারের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ভিকটিম ঘটনার ৫ দিন পূর্বে বিজয়কে উক্ত ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে এবং বিজয়ের ব্যবহৃত মোবাইল হেফাজতে নিয়ে কৌশলে বিজয় ও শ্রাবণীর স্পর্শকাতর ছবি নিজের ব্যক্তিগত মোবাইলে নেয়।
এরপর ভিকটিম শ্রাবনীকে রাস্তায় একা পেয়ে তার ও বিজয়ের স্পর্শকাতর ছবির কথা উল্লেখ করে অনৈতিক সম্পর্কের জন্য প্রস্তাব দেয় এবং আরও বলে যে, উক্ত প্রস্তাবে রাজি না হলে ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে। শ্রাবণী ভিকটিমের প্রস্তাবের বিষয়টি সাথে সাথে বিজয়কে জানায়।
এর পর থেকেই ভিকটিম প্রায়শই মোবাইল ফোনে শ্রাবণীকে অনৈতিক প্রস্তাবের বিষয়ে বলে। শ্রাবণী উপায়ান্তর না পেয়ে পুনরায় বিজয়কে জানায়। উক্ত কারণে বিজয় ও শ্রাবণী ভিকটিমের উপরে ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় ৬ নভেম্বর মধ্যরাতে শ্রাবণীকে মোবাইলের মাধ্যমে ভিকটিম অনৈতিক প্রস্তাবের কথা বলে এবং তার বাড়িতে আসবে মর্মে জানায়।
ভিকটিমের উক্ত প্রস্তাব পেয়ে শ্রাবণী সাথে সাথে বিজয়কে মোবাইলে ঘটনার বিষয়ে জানালে হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিজয়, শ্রাবণীকে বলে যে তুমি ভিকটিমকে ফোর্ডনগর সাকিনস্থ আক্তার ডেইরী ফার্ম সংলগ্ন ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে আসতে বলো। ভিকটিম শ্রাবণীর ফোন পেয়ে উল্লেখিত স্থানে পৌঁছে শ্রাবণীর সাথে দেখা করে কথা বার্তা বলতে থাকে।
এরই এক পর্যায়ে উল্লেখিত স্থানে পূর্বে থেকে ওৎ পেতে থাকা বিজয় পিছন থেকে এসে ভিকটিমের মাথার পিছনে ইট দিয়ে আঘাত করলে ভিকটিম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অতঃপর শ্রাবণী ভিকটিমের পা চেপে ধরে এবং বিজয় তার সাথে থাকা কাপড় কাটার বড় কেচি দিয়ে ভিকটিমের মাথায় ও গলায় উপুর্যপুরি আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে ভিকটিমের মৃতদেহ ও আলামত নদীর মধ্যে ফেলে ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়।
অতঃপর অদ্য শুক্রবার (৮ নভেম্বর) স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে মৃতদেহটি দেখতে পেয়ে সিংগাইর থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতপূর্বক মৃতদেহ মর্গে প্রেরণ করেন।
উক্ত ঘটনার রহস্য উদঘাটনে র্যাব-৪, সিপিসি-৩, মানিকগঞ্জ এর একটি আভিযানিক দল দ্রুততম সময়ে ঘটনাস্থলে পৌছে তথ্য-প্রযুক্তি ও ঘটনাস্থলে থাকা পারিপার্শ্বিক আলামত এবং তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত ঘটনার রহস্য উদঘাটন পূর্বক ঘটনার সাথে জড়িত মুলহোতা বিজয় ও তার সহযোগী শ্রাবনী আক্তারকে সিংগাইরের ফোর্ডনগর এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে সিংগাইর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে।