রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার তাছলিমা (৩৫) ও গোয়ালন্দ উপজেলার শহীদ মোল্লা (৪৪) দুই ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা পুলিশ। এ দুই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
গ্রেফতারকৃতরা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
রোববার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোছাঃ শামিমা পারভীন।
শহীদ হত্যাকাণ্ডের গ্রেফতারকৃতরা হলেন- রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের গোপালবাড়ী এলাকার ইদ্রিস আলী খানের ছেলে শাকিল খান (২৫) ও গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা এলাকার হালিম খানের ছেলে হাসিবুল হাসান (২২)। তাছলিমা হত্যাকাণ্ডের গ্রেফতারকৃতরা হলেন- পাংশা উপজেলার মাদুলিয়া গ্রামের মৃত জব্বার মন্ডলের ছেলে মোনসের মন্ডল (৩৮) ও একই উপজেলার গোনাবাড়ি বনগ্রাম এলাকার মৃত হাসেম মিয়ার ছেলে আমিন মিয়া (৩৬)।
নিহত শহীদ মোল্লা পাবনা জেলার আমিনপুর থানার বড় দুর্গাপুর গ্রামের কানাই মোল্লার ছেলে।
পুলিশ সুপার মোছাঃ শামিমা পারভীন জানান, শহীদ মোল্লা সর্বহারা গ্রুপের সদস্য ছিলেন। তার বাড়ি পাবনা জেলার আমনিপুর থানা এলাকায়। তার বিরুদ্ধে ৩ টি হত্যা মামলাসহ ৫টি মামলা চলমান আছে। মূলত নদী কেন্দ্রিক চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্রে করে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ১৩ জুলাই বিকেলে অজ্ঞাত একদল দুর্বৃত্ত শহীদ মোল্লাকে গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের রমজান মাতবরপাড়া এলাকার নির্জন এক মেহগনি বাগানের ভেতরে নিয়ে যায়।
সেখানে তারা শহীদ মোল্লাকে কাঠের বাটাম দিয়ে বেদম পেটায় এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। এতে মারাত্মক আহত অবস্থায় শহীদকে ওই দিন বিকেল ৫টার দিকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে তাকে ফেলে রেখে দুর্বৃত্তরা দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে, গত ২৫ অক্টোবর কালুখালী উপজেলার মোহনপুর বিল সংলগ্ন ধানক্ষেতে আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী এক অজ্ঞাতনামা মহিলার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সংক্রান্তে কালুখালী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। মামলার ঘটনা তদন্তে থানা পুলিশ ও ডিবির সমন্বয়ে একাধিক টিম মাঠে নামে।
মামলা তদন্তের একপর্যায়ে গত ৮ নভেম্বর ওই বিল সংলগ্ন ধানক্ষেত থেকে ১টি ভ্যানিটি ব্যাগ, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য জিনিস পাওয়া যায়। প্রাপ্ত জিনিসপত্র বিশ্লেষণ করে জানা যায়, এগুলো ধানক্ষেতে পড়ে থাকা অজ্ঞাতনামা মৃত ওই মহিলার। পরে মহিলার পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ। পরবর্তীতে তাছলিমার পিতা বাদী হয়ে গত ৯ই নভেম্বর কালুখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভিকটিম তাছলিমা (৩০) এর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে গত ১৮ই অক্টোবর টাঙ্গাইল থেকে তাকে পাংশায় ডেকে নিয়ে এসে ৩ জন মিলে তাকে ধর্ষণ করে এবং পরে হত্যা করে মরদেহ গুম করে।
নিহত তাছলিমা টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার শাখারিয়া গ্রামের মোঃ দুদু তালুকদারের মেয়ে। ১০ বছর আগে তাসলিমার বিয়ে হয়। ৫/৬ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।