উৎসবমুখর পরিবেশে ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত বরেন্দ্রর কৃষকরা

, জাতীয়

মোঃ আব্দুল হাকিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2024-11-15 19:51:34

বরেন্দ্র অঞ্চলের মাঠজুড়ে এখন সোনালি ধানের উৎসব। শুরু হয়েছে আমন ধান কাটার মৌসুম। দলবদ্ধভাবে এখন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। মাঠে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। কেউ ধান কেটে জমি খালি করছেন, আবার কেউ মাড়াই শেষে ধান বস্তায় ভরে বাড়িতে তুলছেন। বাম্পার ফলনের আনন্দে কৃষকরা নতুন স্বপ্ন বুনছেন।

এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা, যা কৃষকদের মনে বাড়তি উৎসাহ যোগাচ্ছে।

কৃষকরা বলছেন, মৌসুমের প্রথমদিকে আবহাওয়ার অনিয়মিত পরিস্থিতি ও খরার কারণে আমন উৎপাদন নিয়ে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তবে শেষ পর্যন্ত প্রকৃতির অনুকূলতায় সেই শঙ্কা কাটিয়ে উঠেছেন।


কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে রাজশাহী জেলায় আমনের বাম্পার ফলনের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। এ সফলতার পেছনে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি, কৃষি বিভাগের সঠিক নির্দেশনা, এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাঝেও কৃষকদের প্রচেষ্টা ও ধৈর্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রে জানা গেছে, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এই অতিরিক্ত আবাদ এবং পরিবেশের সহায়ক পরিস্থিতির কারণে আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তারা জানিয়েছেন যে কৃষকরা বর্তমানে ধান কাটার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন এবং ইতিমধ্যেই বাজারে ধানের ভালো মূল্য পাওয়ায় তাদের মাঝে সন্তোষ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

কৃষি অফিস বলছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৩ হাজার ৫৬৭ হেক্টর জমি। তবে বাস্তবে চাষ হয়েছে ৮৪ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে। এ আবাদ থেকে ৩ লাখ ৫ হাজার ৭৬২ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আবাদের ৩০ শতাংশ জমি থেকে ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৯২ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। এই তথ্যের ভিত্তিতে এ বছর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা যেমন ছাড়ানো সম্ভব হয়েছে, তেমনি উৎপাদনেও রেকর্ড সৃষ্টি হবে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।


২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমনের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮১ হাজার ৭৫৯ হেক্টর জমি, যার মধ্যে আবাদ হয়েছিল ৮৩ হাজার ১৭৭ হেক্টরে। ঐ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই লাখ ৯১ হাজার ৬২ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হয়েছিল, এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়েছিল। অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবে গত কয়েক বছর ধরে আমন উৎপাদনে রাজশাহী জেলার কৃষকরা সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। তবে পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় এবার আমনের আবাদ ও উৎপাদনে বেশ ভালো অগ্রগতি হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার গোদাগাড়ী, পবা, এবং দূর্গাপুর উপজেলায় ধান কাটার চিত্র বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। এখানে উৎসবমুখর পরিবেশে কৃষকরা তাদের ফসল কেটে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন এবং কেউ কেউ মাঠের পাশেই মাড়াইয়ের কাজ করছেন। ধান মাড়াইয়ের সময়ও স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে সহযোগিতার এক আবহ সৃষ্টি হয়েছে, যা কৃষি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা যায়। কৃষকদের মধ্যে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস দেখা যাচ্ছে। কারণ মৌসুমের শুরুতে বাজারে ধানের ভালো দাম পেয়েছিলেন তারা।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের আমন মৌসুমে শুরুতে অনাবৃষ্টি এবং পরে অতিবর্ষণের কারণে কিছু কিছু জমিতে ধানের ক্ষতি হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাম্পার ফলন হয়েছে। অনেক জমিতে ডুবে যাওয়ার ফলে ফলন কম হয়েছে, তবে এতে পুরো চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।


রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষক আফজাল হোসেন জানান, তার আড়াই বিঘা জমিতে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। পানির খরচ কিছুটা বেশি হলেও ফলন আশানুরূপ হচ্ছে। প্রতিটি বিঘায় ২২ মণের বেশি ধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

দূর্গাপুর উপজেলার কৃষক শহীদুল ইসলাম জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছেন এবং মোটামুটি ভালো ফলন পেয়েছেন। বন্যার সময় কিছু জমি ডুবে গিয়েছিল, তবে বাকি জমিতে ভালো ফসল হয়েছে। তিনি আশাবাদী যে এ মৌসুমে তিনি লাভবান হবেন।

পবা উপজেলার কৃষক বারিউল হক বলেন, এবার আমন ধানের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাম্পার ফলন পেয়েছি। আমার তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি, আর প্রত্যেক বিঘায় ২০ মণের বেশি ফলন হয়েছে। ধানের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। আশা করছি, এবার খরচ তোলার পর হাতে ভালো পরিমাণ টাকা থাকবে। এই ফলন আমাদের পরিবারের জন্য অনেক স্বস্তি এনে দিয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোসা. উম্মে ছালমা জানান, এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে এবং ফলন ভালো হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হওয়ায় আশা করছি যে এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর