চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুজন আইনজীবীকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম মিথ্যাচার চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা আইনজীবীর নেতারা। তারা বলেন, ওই দুইজন আইনজীবী সম্পূর্ণ সুস্থ হলেও তারা গুরুতর অসুস্থ এবং আইসিইউতে আছেন বলে প্রচার করা হয়েছে। মূলত হাসিনার পতনে ভারত সরকারের মাথা খারাপ তাই তারা এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে আইনজীবী আলিফ হত্যার সার্বিক বিষয়ে সমিতির মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এমন দাবি করেছেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন বলেন, আমি তো বলিনি বাইরে থেকে আইনজীবী এনে ডিফেন্স করতে পারবে না। তবে হত্যা মামলার একটি নিয়ম আছে। হত্যা মামলা যখন চলবে, তখন আদালত নিজেই একজন আইনজীবী নিয়োগ করবেন আসামিপক্ষে। এটাকে স্টেট ডিফেন্স বলে। যিনি মারা গেছেন তিনি আমাদের সমিতির সদস্য। তাই আমরা মনে করি, তার রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আসামিপক্ষে দাঁড়িয়ে আমাদের কেউ নির্দোষ, এটা যেন না বলে সে অনুরোধ করেছি। তবে আইনজীবী থাকবে না-এমনটা বলিনি।
‘কোনো আইনজীবীকে নাজেহাল করা হয়েছে, আদালতে যেতে দেওয়া হয়নি কিংবা হামলা করা হয়েছে- এমন কোনো অভিযোগ আমি পাইনি। মামলাটির আসামিদের মধ্যে যাদের নাম এসেছে বলে শুনেছি অধিকাংশই আদালতে তারা মামলা লড়ছে স্বাভাবিকভাবে, আমি শুনেছি। কেউ যদি না আসে এটা ব্যক্তিগত বিষয়। অনেকেই আদালতে আদালতের কার্যক্রম করছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশ নিয়ে জঘন্য মিথ্যাচার করছে। সেখানে আমাদের আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট রিগান আচার্য ও অ্যাডভোকেট শুভাশিষের ছবি এডিট করে জঘন্য মিথ্যাচার করা হয়েছে। তারা কোনো ধরনের আহত ও হামলার কোন ঘটনা ঘটেনি। তাদের নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সাইফুল ইসলাম আলিফকে উগ্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনের অনুসারীরা নির্মমভাবে কুপিয়ে, লাঠিপেঠা করে নির্মমভাবে হত্যা করেন। দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ দেশব্যাপী এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। আমরা হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই বলে আসছি ওই দিনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার সময় আদালত এলাকার নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় সন্ত্রাসীরা এরকম নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
‘এছাড়া মসজিদ, আদালত, ল-চেম্বার, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী জনগণের গাড়ি, দোকানপাট ভাঙচুর করার সুযোগও পেয়েছিল তারা। আদালত অঙ্গনে দীর্ঘসময় চিন্ময় দাশকে প্রিজন ভ্যানে রাখা হয় এবং তিনি প্রিজন ভ্যান থেকে হ্যান্ড মাইক দিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে তার অনুসারীদের ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার নির্দেশ দেন। ফলে আইনজীবী সমিতির ইতিহাসে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা সংগঠিত হয়। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ইসকনের যে সকল সন্ত্রাসী এখনো গ্রেফতার হয়নি তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের জন্য প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে হত্যা মামলায় অন্যতম আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি মো. আবদুল কাদের, সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মাহফুজুর রহমান খান, সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. কাশেম কামাল, অর্থ সম্পাদক কাজী মো. আশরাফুল হক আনসারী জুয়েল, পাঠাগার সম্পাদক আহমেদ কবির করিম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মারুফ মো. নাজেবুল আলম, ক্রীড়া সম্পাদক হাবিবুর রহমান, সদস্য শাহ ইমতিয়াজ রেজা চৌধুরী নিশান, মো. শাকিল ও আবদুল্লাহ আল ফাহাদ প্রমুখ।