‘ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হলে দুর্নীতি কমানো সম্ভব’

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-12-14 14:44:29

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেছেন, রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ী এই তিন পক্ষের যোগসাজশেই জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি হয়েছে। আওয়ামী লীগের শাসন আমলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিনিময় ছাড়া কোন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়নি।

তিনি বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও পিএম অফিসের একক ক্ষমতার কারণেই এসব দুর্নীতির বিস্তার হয়েছে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হলে দুর্নীতি কমানো সম্ভব।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর এফডিসিতে বিগত সরকারের আমলে জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাতের দুর্নীতি নিয়ে আয়োজিত এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. ম. তামিম এসব কথা বলেন। ছায়া সংসদটির আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) দেশের সবচেয়ে অস্বচ্ছ একটি প্রতিষ্ঠান। এই অস্বচ্ছতার পিছনে বিগত সরকারের স্বার্থ জড়িত ছিলো। লস দেখিয়ে দেখিয়ে উচ্চমূল্য নির্ধারণের জন্যই প্রতিষ্ঠানটিকে অস্বচ্ছ রাখা হতো। বর্তমান সরকার এসেও এখন পর্যন্ত প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছ করতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, তিন দিনের মধ্যে কোন আলাপ আলোচনা ছাড়াই তড়িঘড়ি করে আদানির সাথে বিদ্যুৎ চুক্তি করা হয়। আদানির সঙ্গে চুক্তিটি অসম। এক্ষেত্রে শতভাগ ক্যাপাসিটি চার্জ পেমেন্টের পরেও ৪০ ভাগ আরও অতিরিক্ত বিদ্যুতের মূল্য দিতে হয়। এই চুক্তিটি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মাফিয়াদের আইনের আওতায় না আনলে মাফিয়াতন্ত্র দমন হবে না।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেন, নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন না করে কমিশনের লোভেই এলএনজির দিকে ঝুঁকে পড়া ছিলো ভুল উদ্যোগ। জবাবদিহিতাকে এড়ানোর জন্য বিগত সরকার গণশুনানির পরিবর্তে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম নির্ধারণ করতো, যা ছিলো অস্বচ্ছ।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ডাকাতরা বাংলাদেশে আর্থিক খাতের মত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতেও অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল। লুটেরাদের সুযোগ করে দিতে ২০১০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিতর্কিত ইনডেমনিটি আইন পাস করেছিল, যার মেয়াদ দফায় দফায় বাড়িয়ে দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও বিতরণ, সঞ্চালন ও মিটার কেনাকাটার নামে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। যাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য মিলেছে। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা ও চাহিদা কতটুকু তার কোনো সঠিক হিসাব নেই। গত সাড়ে ১৫ বছরে কোনো দরপত্র ছাড়াই বেসরকারি খাতে শতাধিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। যার বেশিরভাগই কোনো কাজে আসেনি। বিগত সরকার সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন না করেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। ফলে যতটুকু বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো তা সঞ্চালন লাইনের অভাবে বিতরণ সম্ভব হতো না। তাই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হওয়া স্বতে¦ও লোডশেডিং থেকে আমাদের মুক্তি মিলেনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর