মৃত লাশ জীবিত করার গুজবে তোলপাড়!

ময়মনসিংহ, জাতীয়

রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ), বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 00:07:04

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে কবর থেকে মৃত লাশ জীবিত করার গুজব ছড়িয়ে গ্রামবাসীর তোপের মুখে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে রহিমা আক্তার (৪৫) নামে এক নারী।

রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত রহিমা ওই গ্রামের মৃত মইজ উদ্দিনের স্ত্রী।

এদিকে মৃত লাশ জীবিত করার গুজব ছড়িয়ে পড়লে রোববার সকাল থেকেই শত শত উৎসুক লোকজন ঘটনা দেখতে কোনাপাড়া গ্রামে ভিড় জমায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উৎসুক লোকজনকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩ মাস পূর্বে কোনাপাড়া গ্রামের মো. জালাল মিয়ার ছেলে আবু সাঈদ (২০) শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর পর সাঈদের মরদেহ নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। মৃত্যুর ঘটনার ৩ মাস পরে গতকাল শনিবার প্রতিবেশী নারী রহিমা আক্তার সাঈদের মা ফাতেমা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং জানান সাঈদ কবরে জীবিত আছেন। ছেলেকে ফিরে পেতে চাইলে ওই নারী সাঈদকে কবর থেকে জীবিত তুলে আনবেন। রহিমা আক্তারের এমন কথা শুনে আবু সাঈদের মা কবর থেকে লাশ তোলার অনুমতি দেন। এরপর দুপক্ষের সমঝোতায় আজ রোববার বাদ জোহর নামাজের পর আবু সাঈদের লাশ কবর থেকে জীবিত তুলে আনার সময় ঠিক করা হয়।

এক কান দু’কান করে মৃত লাশ জীবিত করার খবর ছড়িয়ে পড়লে রোববার সকাল থেকেই কোনাপাড়া গ্রামে শত শত উৎসুক লোকজন ঘটনা দেখতে ভিড় করে।

মৃত আবু সাঈদের মা ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘গতকাইল শনিবার রহিমা আক্তার আমারে বলে, আমার ছেলে কবরে বাঁইচ্যা আছে। হে ছেলেরে কবর থেইক্যা জেতা বাইর কইর‌্যা আনবো। আর আমি যদি হেরে এই কাজ করতে না দেই তাইলে আমার ছোট ছেলেরেও হারাইতে হইবো। তাই ভয়ে আমি লাশ তোলার অনুমতি দেই। কিন্তু অহন হুনতাছি হে বলে বাড়ি থেইক্যা পলাইছে।’

এদিকে অভিযুক্ত রহিমা আক্তারের বাড়িতে গিয়েও দেখা যায় উৎসুক জনতার ভিড়। তবে রহিমাকে বাড়ির কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

লাশ উত্তোলনের বিষয়ে রহিমা আক্তারের ছেলে রুবেল বলেন, ‘খবরডা আমিও হুনছি। কিন্তু আম্মারে তো ছোট বইন শরীফা আজগা সকালে বাড়িত আইয়্যা লইয়্যা গেছেগা। কই গেছে জানি না।’

এদিকে মোবাইলে শরীফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আল-আমিন নামে এক ব্যক্তি তার স্বামী পরিচয়ে বলেন, ‘শাশুড়ি আম্মারে জিনে ধরছে। উনি আমার সঙ্গেই আছেন। তাকে নিয়ে আমরা পূর্বধলার কাজলা গ্রামে তার মহিলা ওস্তাদের কাছে লইয়্যা যাইতাছি। ওস্তাদে কইছে কবর থেইক্যা লাশ তুলন যাইতো না। তুললে আমার শাশুড়ি পাগল অইয়্যা যাইব।’

গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, লাশ উত্তোলনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। সম্পূর্ণ বিষয়টি একটি গুজব। জনসাধারণকে গুজবে কান দিতে নিষেধ করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর