বান্দরবানে লামা উপজেলায় সরই ইউনিয়নের তংঙঝিরি ত্রিপুরা পাড়ায় খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী ত্রিপুরাদের ১৭টি ঘরে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে দুর্বৃত্তরা পাড়ায় ঢুকে আগুনে দিয়ে পালিয়ে যায়। গির্জা না থাকায় ওই পাড়ার বাসিন্দারা বড়দিন উপযাপন করতে পুরোনো পাড়ায় আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে গিয়েছিলেন।
স্থানীয়রা জানায়, তিন-চার বছর আগে একদল লোক এসে দাবি করে পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের স্ত্রীর নামে ওই পাড়ার জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে। তারা পাড়ার বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে সেখানে একটি বাগান করেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ওই পাড়ার বাসিন্দারা আবার সেখানে এসে ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করেন।
৩০১ ও ৩০৩ ডলুছড়ি মৌজার হেডম্যান দূর্জধন ত্রিপুরা বলেন, আমার মৌজায় এ ত্রিপুরা পল্লীতে ১৯টি বসতঘর রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি পুড়ে ছাই হয়েগেছে। এ সব বসত বাড়ীতে কিছু নেই বললে চলে। নিঃস্ব হয়েগেছে এ সব মানুষ।
নতুন তংঙঝিরি পাড়ার কারবারি পাইসাপ্রু ত্রিপুরা বলেন, এই পাড়াটি আমাদের অনেক পুরনো পাড়া। আমদের তিন-চার প্রজন্মের পুরুষেরা এই পাড়াতেই ছিলাম। চার-পাঁচ বছর আগে একদল মানুষ নিজদের 'এসপির লোক' পরিচয় দিয়ে পাড়াটি উচ্ছেদ করে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দখলদাররা পাড়ে ছেড়ে চলে যান। এর পর ১৯টি ত্রিপুরা পরিবার সেখানে এসে ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করে। এর নাম দেওয়া হয় তংঙঝিরি নতুন পাড়া। এখানে গির্জা না থাকায় বড়দিন উপলক্ষ্যে নতুন পাড়ার বাসিন্দারা ঘরবাড়ি খালি রেখে গতকাল রাতে সবাই তংঙঝিরি পাড়ায় যায়। রাতে কেউ না থাকায় দুর্বৃত্তরা পাড়ায় আগুন দেয়। এতে দুটি বাদে সব ঘর পুড়ে যায়।
সরই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস কোম্পানি বলেন, গতরাতে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে ১৭টি ঘর পুড়ে গেছে বলে শুনেছি। ইউএনও এবং আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাচ্ছি।
লামা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুপায়ন দেব বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। প্রাথমিকভাবে সতেরটি পরিবারের জন্য পরিবারপ্রতি একটি কম্বল ও একবস্তা চাউল দিয়ে এসেছি। জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লামা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত ওসি) মো. এনামুল হক ভুঁইয়া বলেন, সরই ইউনিয়নের এটা দুর্গম এলাকা তংঙঝিরি এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ড ঘটনাটি ঘটে। গত ৫ আগস্টের পর জমি দখলের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। দোষীদের আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।