ভোরের আলো ফুটতেই পাহাড়ের সবুজ মেখে মেরিন ড্রাইভের পিচঢালা রাস্তা ধরে দৌঁড়াচ্ছেন তরুণরা। এর এক পাশে দিগন্ত ছোঁয়া নীল জলের বিশাল সমুদ্রের হাওয়া মেখে যাচ্ছে শরীরে। এমন দৃশ্যই ছিলো কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভে।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিজয় দিবস হাফ ম্যারাথনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
ভোরে সমুদ্রের কূল ঘেঁষে যাওয়া কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের দরিয়া নগর থেকে শুরু হয়ে ইনানী পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার দূরত্বের এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে ৩ শতাধিক দেশি-বিদেশি প্রতিযোগী।
ভিন্ন আঙ্গিকের এই প্রতিযোগিতা ঘিরে উচ্ছ্বাস ছিলো অংশগ্রহণকারীদের। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া সেনাবাহিনীর কর্মীরা জানান, সমুদ্র দেখে ২১ কিলোমিটার দৌড়ে তারা খুবই আনন্দিত।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আশা অংশগ্রহণকারীরা জানালেন এক পাশে পাহাড় অন্যপাশে সমুদ্র এমন মনোরম দৃশ্য দেখে দৌড়ানোর অনুভূতি। প্রকৃতির সাথে নান্দনিক পরিবেশে এমন আয়োজন অসাধারণ।
কক্সবাজারে কাজের সুবাদে বাস করা আমেরিকান এক দম্পতি অংশ নেন প্রতিযোগিতায়। তারা কক্সবাজারের আঞ্চলিক ভাষাও আয়ত্তে আনেন অনেকটা। তাদের মধ্যে স্ত্রী বলেন, "আঁরা জামাই বউয়ে এন সুন্দর রাস্তাত হারা হারা দুইজ্জি। চাইর নম্বর পাইয়ি ফোয়াতি। আততু বেশি গম লাইজ্ঞে এডে দুরিয়ারে।" (আমরা স্বামী স্ত্রী এমন সুন্দর রাস্তায় তাড়াতাড়ি দোড়াইছি। চার নম্বর হয়েছি একসাথে। আমার ভালো লেগেছে এখানে দৌড়ে)।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রথম ফিনিস লাইন অতিক্রম করে মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। তিনি ঢাকা থেকে অংশগ্রহণ করেছিলেন। দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন আশরাফুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন। এসময় তিনি বলেন, শুধু বিজয় দিবস মেরাথনই নয়,আগামীতে এমন মনোরম পরিবেশে একটি সাইক্লিং রেস ও আরও একটি মেরাথন আয়োজন করার পরিকল্পনা করছে আয়োজকরা। ২৫০০ বছর পুরোনো এই মেরাথনের সাথে সামরিক বাহিনীর সম্পৃক্ততা থেকেই আজকের এই আয়োজন।
জেলা প্রশাসক সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ৩৯৮ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ২৪৮ জন রেসটি সম্পন্ন করেছে। সকলের সমন্বয়ে আয়োজন সফল করতে পেরে খুশি আমরা।
মুক্তিযুদ্ধের বীরদের প্রতি সম্মান ও পরিবেশের প্রতি সচেতনতা তৈরি করতেই এমন আয়োজন। যার উদ্যোগ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
ম্যারাথনের সবচেয়ে উপভোগ্য ছিলো সাগরের গর্জনের সাথে হিমেল হাওয়া মেখে শরীর মিলিয়ে দেয়া প্রকৃতির মাঝে, এমনটাই অভিমত অংশগ্রহণকারীদের।