মেলায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পাশে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনী

বিবিধ, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা ২৪.কম | 2023-08-25 11:50:38

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চলছে বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে গ্রন্থমেলা। সকল শ্রেণী পেশার মানুষজন এক উৎসবমুখোর পরিবেশে প্রিয় লেখকের বই কিনছেন। বাবা-মা’র সাথে ঘুরতে আসা ছোট্ট সোনামণিদেরকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন বাংলা, বই মেলা ও বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে।

বাংলা একাডেমির সহযোগীতায় প্রতিবছরের ন্যায় এবারও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য 'ব্রেইল' একটি বিশেষ পদ্ধতির বই নিয়ে এসেছে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনী। এসব বই আবার বিতরণ করা হয় একেবারে বিনামূল্যে।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৮৩ ও ৮৪ নং স্টলে রয়েছে ব্রেইল প্রকাশনীর বই। এই প্রকাশনী নতুন আটটি বই প্রকাশ করেছে ব্রেইলে। এসব বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নীলিমা ইব্রাহিমের আমি বীরাঙ্গনা বলছি, রামেন্দ্র মজুমদারের আমার স্কুল, নাজিয়া জাবীনের তরু, ইমদাদুল হক মিলনের ভালোবাসার সুখ দুঃখ প্রভৃতি। গল্প, উপন্যাস, কবিতাসহ রয়েছে বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী। 

স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনীর উদ্যোক্তা নাজিয়া জাবীন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে আমরা মেলায় স্টল দিয়ে আসছি। ৬৮ টির মতো বই আমরা প্রকাশ করেছি। এভাবে যদি সকল প্রকাশনী দু একটি করেও বই প্রকাশ করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা ঘুরে ঘুরে মেলা উপভোগ করতে পারতেন।’

তিনি আরও জানান, ‘স্পর্শ প্রকাশনী বই বিক্রি করে না। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের মাঝে বিতরণ করে থাকে। এছাড়াও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য যদি কেউ বই নিতে চান তাদেরকেও তারা বিভিন্নভাবে বই সরবারহ করেন। প্রয়োজনে কল (০১৭১৪৯০৭৫০৫ এই নম্বরে) দিয়ে সংগ্রহ করা যাবে ব্রেইল প্রকাশনীর বই। 

বেশ কয়েকজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে দেখা যায় স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনীতে। তারা নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিচ্ছেন। হাতের আঙুলের স্পর্শে দিব্যি পড়ে চলেছেন লাইনের পর লাইন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মাইশা বার্তা২৪.কমকে জানান, ছোট বেলা থেকে ব্রেইল পড়ে আসছি। কিন্তু এই মাধ্যমে বইয়ের সংখ্যা অপ্রতুল। তাই রেকর্ড করে শুনে শুনে মুখস্থ করি। স্পর্শ গল্প কবিতা উপন্যাস ব্রেইল পদ্ধতিতে বের করেছে। এতে আমরা উৎসাহ বোধ  করছি। খুবই ভালো লাগছে। 

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পাশাপাশি সাধারণ দর্শনার্থীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। অনেকেই পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দেখছেন কালো কালির লেখার পরিবর্তে সাদা কাগজের বিশেষ বইগুলো। অবশ্য পড়তে পারছেন না। দেখছেন অধীর আগ্রহে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী সৃজিতা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। স্পর্শ করেই তারা পড়ছে। আমি হলে পড়তেই পারতাম না। স্পর্শকে ধন্যবাদ জানাতেই হয় যে এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে। এভাবেই তাদের পাশে আরও বেশি দাঁড়ানো উচিত।’

ব্রেইল পদ্ধতি হচ্ছে একটি বিশেষ পদ্ধতি যার মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য বই মুদ্রণ করা হয়। কাগজে বিশেষ যন্ত্রের চাপ প্রয়োগ করে ছয়টি উঁচু বিন্দু প্রকাশ করা হয়। এই ছয়টি বিন্দুকে উপর নিচ, পাশাপাশি নানাভাবে ব্যবহার করে বা সাজিয়ে অক্ষর, সংখ্যা প্রকাশ করা হয়। যা আঙুলের স্পর্শ ও অনুভূতি ব্যবহার করে পড়তে হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর