কৃষি ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে মাশরুম চাষ। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই কৃষিপণ্য এখন অভিজাত খাদ্যপণ্যের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদার শীর্ষে।
মাদারীপুরের শিবচরের দ্বিতীয়া খন্ড ইউনিয়নের ছোট কুতুবপুর গ্রামে নিজের ২ তলা বাড়ির ছাদে পুষ্টিগুণে ভরপুর এই মাশরুম চাষ শুরু করেছেন স্থানীয় কৃষক ও পশু চিকিৎসক মো: আকতার হোসেন (৪৫)। মাশরুম চাষ করে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে আর্থিক স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
জানা গেছে, অল্প পুঁজিতে অধিক মুনাফার সুযোগ থাকায় শিবচরের অনেক উদ্যোক্তা মাশরুম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এমনই একজন সফল চাষি মো: আকতার হোসেন। মাত্র ১৬০ টাকা বিনিয়োগ করে শুরু করেছিলেন মাশরুম চাষ। বর্তমানে তার মাসিক আয় অর্ধ লক্ষ টাকা।
মো: আকতার হোসেন বলেন, ২০১১ সালে ঢাকা আমার বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাই। তখন দেখি সেখানে জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ট্রেনিং সেন্টার। সেখান থেকে আমি ট্রেনিং নিই। তারপর ১৬০ টাকা পুঁজি দিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করি। আজ দীর্ঘ ১২ বছর ধরে এই মাশরুম চাষ করে আসছি। এখন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের চিন্তা করছি। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কেজি মাশরুম উৎপাদন করি, যা ঢাকায় এবং শিবচরের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাই। এই মাস থেকেই প্রতিদিন ১০০ কেজি মাশরুম উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছি।
পাশাপাশি শিবচর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও দ্বিতীয়া খন্ড ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: মোঃ সোহেল ফরাজী সার্বক্ষণিক পরামর্শ এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহযোগিতা করছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাশরুমে উচ্চমাত্রার প্রোটিন, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য। চিকিৎসাশাস্ত্রেও মাশরুম নানা রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ কারণে এর চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে।
মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক জীবাংশু দাস বলেন, মাদারীপুরের বিভিন্ন জায়গায় মাশরুমের উদ্যোক্তা চাষি তৈরি করা হয়েছে। কিছু প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এবং কিছু উদ্ভুদ্ধকরণের মাধ্যমে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নানা পরামর্শ দিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। আমাদের প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের ঘর তৈরি করে দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সরকারের আরও বিস্তৃত সহযোগিতা ও আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন হলে শিবচরের মাশরুম শিল্প দেশীয় অর্থনীতির অন্যতম প্রধান শক্তিতে পরিণত হতে পারে। এতে কৃষি খাতে আত্মকর্মসংস্থান ও রপ্তানি বাজারে প্রবেশের সুযোগ তৈরি হবে।