রাজশাহীর ৪ উপজেলায় আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী যারা

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট, রাজশাহী, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 18:29:02

রাজশাহী জেলার আটটি উপজেলায় মনোনয়নপত্র বাতিল ও প্রত্যাহার শেষে চেয়ারম্যান পদে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন ১৭ জন। এর মধ্যে বাঘা ও মোহনপুর উপজেলায় একজন করে প্রার্থী থাকায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনে জয়লাভ করবেন।

এছাড়া গোদাগাড়ীতে চার জন ও চারঘাটে তিনজনসহ তানোর, বাগমারা, পুঠিয়া ও দুর্গাপুরে দুইজন করে চেয়ারম্যান পদে বৈধ প্রার্থী টিকে গেছেন। এর মধ্যে চারটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।

তবে আটটি উপজেলার কোনোটিতেই নেই বিএনপির কোনো প্রার্থী। যারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন, তারা দলের নির্দেশ মেনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না থাকায় উপজেলা নির্বাচন অনেকটাই তার জৌলুস হারিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন উন্মুক্ত রাখা উচিত ছিল। যারা জনগণের ভোটে জয়ী হবেন তারাই জয়লাভ করবেন। এতে করে নির্বাচনটা প্রাণবন্ত হতো।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. বদিউজ্জামান। এই উপজেলায় আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম।

বাগমারায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা যুবলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক বাবুল হোসেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অনিল কুমার সরকার।

চারঘাটে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফকরুল ইসলাম। তবে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট টিপু সুলতান।

দুর্গাপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের মন্ডল। এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম।

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আশা করি তারা ভোটের আগেই সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ নেতা আসাদ বলেন, ‘এটা ঠিক যে দলের অন্য প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন প্রাণবন্ত হতো, কিন্তু দল সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। তারা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং নির্বাচনটা আমরা যেরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আশা করেছিলাম সেরকম হবে না।’

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুল খালেক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বিএনপির নির্বাচনে অংশ না নেওয়াটা নির্বাচনের জন্য সুখবর বয়ে আনবে না। তবে বাংলাদেশে তো শুধু বিএনপি দলই নেই। বিএনপির বাইরেও তো রয়েছে ১৪ দল, ২০ দলসহ বহু বাম সংগঠন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা কেন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না? তার মানে, তাদেরও জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা নেই, জনসমর্থন নেই। এই যে কেউ সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না, আবার কারও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সক্ষমতাই নেই। এতে করে নির্বাচনের প্রতি জনগণের আগ্রহ কমে যাবে।’

অধ্যাপক খালেক বলেন, ‘আওয়ামী লীগে সাংগঠনিক কাঠামোর কারণেই দলীয় মনোনয়নের বাইরে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আছে। দলীয় শৃঙ্খলার কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে যেহেতু অন্য দলগুলো ঠিক সেইভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বা নেওয়ার সক্ষমতা নেই, সে ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়নের বাইরেও দল থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকলে নির্বাচনটা প্রাণবন্ত হতো।’

তিনি বলেন, ‘তবে এই ক্ষেত্রে আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন, সেই নীতি অনুযায়ী নির্বাচন হওয়া ভাল। তিনি সবাইকে জনগণের কাছে যেতে বলতেন। জনগণ যাকে মনোনীত করত, তিনিই নির্বাচনে জয়ী হতেন। দলের পক্ষে কাজ করতেন।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর