‘তাড়াতাড়ি চলো, একুশে ফেব্রুয়ারি শেষ হয়ে যাচ্ছে’

ঢাকা, জাতীয়

হাদিদ মোঃ জাবির, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 12:17:01

গুটি গুটি পায়ে বাবার সঙ্গে খালি পায়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে হাঁটছে ১০ বছরের এক শিশু। এতটুকু ক্লান্তি নেই শিশুটির মধ্যে, বরং বাবার তুলনায় তার উৎসাহ অনেক বেশিই। হাঁটতে হাঁটতে বাবাকে শিশুটি বলছে, ‘তাড়াতাড়ি চলো, একুশে ফেব্রুয়ারি শেষ হয়ে যাচ্ছে, ফুল দিতে হবে।’ পাশ থেকে নাম জিজ্ঞেস করতেই চটপট উত্তর, রেজওয়ান। কথা বলে সময় নষ্ট করতে চাচ্ছে না শিশুটি।

কথা বলার আবদার জানালে রেজওয়ান নামের সেই শিশুটি তার বাবার অনুরোধে কথা বলতে রাজি হলো। হাঁটতে হাঁটতে রেজওয়ান বলে, ‘এই প্রথম শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসছি, এর আগে কখনো আসি নাই, টিভিতে দেখেছি আর বইতে পড়েছি একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে।’

বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভোর থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই শিশুটির মতো আরও বহু শিশুর আগমন ঘটে প্রভাতফেরিতে। তাদের খালি পা, হাতে ফুল, মাথায় বাংলাদেশের মানচিত্র-সম্বলিত কাপড়, অনেকের হাতে আবার লাল-সবুজ পতাকাও আছে। শহীদ মিনারের বেদিতে না পৌঁছা পর্যন্ত যেন তাদের মনে স্বস্তি আসছে না।

বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাস্তায় নেমেছে হাজারো মানুষের ঢ্ল। ফুল হাতে নিয়ে শোকের সাদা কালো-পোশাকে খালি পায়ে তারা এগিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে। পিছিয়ে নেই শিশুরাও। অনেকেই তাদের শিশু সন্তানদের নিয়ে এসেছেন প্রভাতফেরিতে। বাবা মায়ের হাত ধরে ছোট ছোট পায়ে এগিয়ে গিয়ে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তারাও।

তার অভিভাবক বলেন, ছেলেকে নিয়ে এসেছি দেশের সংস্কৃতি আর গৌরবের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। আমাদের পর তারাই তো এই দেশের নেতৃত্ব দেবে। এখন থেকেই শিখুক।’

আরেক শিশু অবন্তী জানালো, ‘শহীদ বরকত, জব্বারদের সম্মান জানাতে এসেছি।’

সরকারি চাকরিজীবী ফিরোজ আহমেদ এসেছেন তার সন্তান আফরানকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘পিতা হিসেবে আমার উচিত আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্যের সাথে আমার সন্তানকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, এটা সব অভিভাবকদের দায়িত্ব। তাই আজকে সন্তানকে নিয়ে আসলাম, দেখুক, জানুক।’

শিক্ষিকা পারভিন সুলতানা তার নাতি, নাতনিদের নিয়ে এসেছেন শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে, দিদার সাথে এসে খুশি তারাও। তিনি জানালেন, ওরা বিদেশে থাকে, স্বাভাবিকভাবেই বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতি জানার সুযোগ খুব কম সেখানে। তাই ওদের নিয়ে এসেছেন প্রভাতফেরিতে। মাতৃভাষার জন্য বাঙালিদের যে আত্মত্যাগ, তা ওদের জানা উচিত।

এমনিভাবে অনেকেই এসেছেন তাদের সন্তানদের নিয়ে, হাঁটতে হাঁটতে বলেছেন ভাষা সংগ্রামের ইতিহাস, উওর দিয়েছেন তাদের নানা প্রশ্নের।

আজ একুশে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন রফিক, বরকত, জব্বার, শফিক সহ নাম না জানা ভাষা শহীদেরা। কেড়ে এনেছিলেন মায়ের ভাষার কথা বলার অধিকার। তাই বাঙালি জাতির জাতীয় জীবনে এই দিনটি যেমন শোকাবহ তেমনি গৌরবোজ্জ্বল, অহংকারে মহিমান্বিত, চিরভাস্বর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর