পুলিশ-সাংবাদিক মিলে পাল্টে দিলেন পাগলকে

ময়মনসিংহ, জাতীয়

উবায়দুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ময়মনসিংহ, বার্তা২৪.কম | 2023-12-12 20:12:25

২১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা তখন সাড়ে ছয়টা। ময়মনসিংহের টাউন হল মোড়ে একটি চায়ের দোকানে চা পান করছিলেন যমুনা টেলিভিশনের ময়মনসিংহ ব্যুরো চিফ হোসাইন শাহীদ ও ২ নং পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেবাশীষ সাহা।

এ সময় তাদের নজর পরে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তির দিকে। যার মাথার চুল জট পাকানো, মুখে লম্বা দাড়ি আর গায়ে ময়লাযুক্ত ছেঁড়া কাপড়। লোকটি হাত বাড়ায় তাদের দিকে। আর তখন তাকে খাবার কিনে দেন তারা। পাশে বসেই খাচ্ছিলো সে।

এ সময় পাগলটিকে নিয়ে এক পরিকল্পনা করেন তারা দুইজন। উদ্দেশ্য বছরের পর বছর রাস্তায় পড়ে থাকা পাগলটিকে খানিক সহযোগিতা করা। ভাবনা মোতাবেক তাৎক্ষণিকভাবে তাকে পাশের এক সেলুনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে লম্বা আর এলোমেলো চুল দাঁড়ি কাটানোও হয় তার। এসব কাণ্ড দেখে সেখানে জমতে থাকে আশপাশের উৎসুক জনতা।

দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় জট পাকানো চুল-দাড়ি কেটে ফেলা হলো। পরে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে করানো হলো গোসল। এরই মধ্যে নতুন পোশাক কিনে আনলেন এসআই দেবাশীষ। পরানো হলো নতুন পোশাক। শীতের কাপড়ের দোকান বন্ধ ততক্ষণে। সাংবাদিক হোসাইন শাহীদ তার গায়ের ব্লেজারটি পরিয়ে দিলেন পাগলকে। সেই মুহূর্তে তার হাতে বড় ধরনের একটি ক্ষত দেখতে পান তারা। দেখা যায়, হাতে থাকা একটি আংটি আঙ্গুলের মাংস ভেদ করে ভেতরে ঢুকে আছে। আর সেই অংশটি পচনও ধরেছে।

বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক হোসাইন শাহীদ কথা বলেন তার এক চিকিৎসক বন্ধুর সাথে। ডাক্তারের পরামর্শে সাথে সাথে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে। রাত তখন সাড়ে দশটা।

এগিয়ে আসেন ডাক্তাররাও। রাতেই হয় হাতের অস্ত্রোপচার । মমেকের সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মোহাম্মদ আরিফ ও মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. সৈয়দ হাসান আকাশ অস্ত্রোপচার করেন তার। এরপর চিকিৎসকরাই ওষুধসহ তার চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করেন।

ডা. মোহাম্মদ আরিফ বলেন, 'হাতের ক্ষতটি খুবই মারাত্মক ছিল। আংটিটি আর কিছুদিন থাকলে আঙ্গুলটি পচে খসে পড়ে যেত এবং জটিলতা বাড়ত। তবে এখন তার হাতে সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে।'

এদিকে পুলিশের এসআই দেবাশীষ সাহা বার্তা২৪.কম-কে জানান, মানবিকতা থেকেই এই কাজটি করেছি। পাগল হলেও তার ভালোভাবে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। তাই তার জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি।

সাংবাদিক হোসাইন শাহীদ বলেন, 'মানুষটি পাগল বলে তার প্রতি সবাই উদাসীন। দিনের পর দিন সে পরে থাকেন রাস্তায়। তার অবস্থা দেখে আমাদের খারাপ লেগেছে তাই আমাদের যতটুকু সাধ্য ততটুকই করেছি। তবে তার চেহারার পরিবর্তন দেখে মনের ভেতর যে কি শান্তি লেগেছে তা বলে বোঝানো যাবে না।'

তিনি আরও বলেন, 'এটা সাংবাদিক, পুলিশ আর ডাক্তারের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। আমরা প্রত্যেকে যদি অন্তত একজন অসহায়ের পাশে দাঁড়াই তাহলে দেশের চেহারাটাই পাল্টে যাবে।'

এদিকে নিয়মিত ওষুধ খাওয়ানোর তাকে জন্য রাখা হয়েছে ২ নং পুলিশ ফাঁড়ির তত্ত্বাবধানে। একইসঙ্গে তার পরিচয় জানার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপ-পরিদর্শক দেবাশীষ সাহা।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর