কার্ড পেয়েও আড়াই বছরে জোটেনি প্রতিবন্ধী ভাতা

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 21:43:31

অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে ভাতা কার্ড পেয়েছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রাশিদা ও রেবেকা। হাতে কার্ড থাকলেও আড়াই বছরে তাদের ভাগ্যে জোটেনি প্রতিবন্ধী ভাতা। দিনমজুর বাবার অভাব অনটনের সংসারে মানবেতর দিন কাটছে তাদের।

প্রতিবন্ধী সন্তানদের চিকিৎসা আর বিয়ে সাদিতে জমি জমা বিক্রি করতে করতে নিঃস্ব হয়ে গেছেন দিনমজুর আব্দুর রশিদ। এখন অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করছেন। সামান্য আয় দিয়ে বহন করতে পারছেন না মেয়েদের চিকিৎসা খরচ।

ছোট মেয়ে রেবেকা আকতারের শিশু কন্যা আফিয়া জান্নাত বৃষ্টি জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী। অভাব অনটনের সংসারে প্রতিবন্ধী দুই মেয়ে ও নাতনি নিয়ে দিশেহারা সত্তর বছর বয়সী আব্দুর রশিদ। অসহায় এই পরিবারটি রংপুর মহানগরীর ৩১নং ওয়ার্ডের ছিলিমপুর এলাকাতে বসবাস করছেন।

আব্দুর রশিদের দুই মেয়ে রাশিদা বেগম (৩৬) ও রেবেকা আকতার (৩২) জন্ম থেকে রাতকানা রোগে আক্রান্ত। অনেক চিকিৎসা করেও দৃষ্টিশক্তিতে ফেরেনি আলো।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিরুপায় আব্দুর রশিদ ১৯৯৯ সালে বড় মেয়ে রাশিদা বেগমের বিয়ে দেন। হতভাগা মেয়ের সংসারে শান্তির জন্য নিজের বসত ভিটার ৪৮ শতাংশ জমি জামাতাকে দিয়ে দেন। স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল রাশিদার সংসার। হঠাৎ করেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রাশিদাকে কোনো কারণ ছাড়াই বাড়ি থেকে বের করে দেয় শ্বশুর বাড়ির লোকজন। অনেক চেষ্টা করেও স্বামীর বাড়িতে আর ঠাঁই হয়নি তার। বাধ্য হয়ে বৃদ্ধ বাবার বাড়িতেই আশ্রয় নেয় রাশিদা।

এদিকে ২০০৬ সালে অন্যের কাছে হাত পেতে আর ঋণ করে ৭৫ হাজার টাকা যৌতুক দিয়ে ছোট মেয়ে রেবেকা আকতারের বিয়ে দেন আব্দুর রশিদ। বিয়ের তিন বছরের মাথায় রেবেকার কোল জুড়ে আসে আফিয়া জান্নাত বৃষ্টি। জন্ম থেকে এই শিশু শারীরিক প্রতিবন্ধী। রেবেকার সংসারেও নেমে আসে বড় বোন রাশিদার মতো দুর্যোগ। প্রতিবন্ধী শিশুকে নিয়ে সংসার ছাড়া হতে হয় তাকেও। বর্তমানে অসহায় বাবার বাড়িই তাদের নিরাপদ আশ্রয় স্থল।

আব্দুর রশিদের স্ত্রী মাহামুদা বেগম বলেন, ‘ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মেয়েদের বিয়ের পরও অন্ধত্বের কারণে জামাতারা সন্তানদের বাড়িতে রেখে যায়। তারপর থেকে দুই মেয়ে বাড়িতেই আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রেবেকার মেয়ে বৃষ্টি জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী। মেয়ে ও নাতনির চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা ব্যয় করেছি। কোনো ফল পাইনি। ২০১৬ সালে অনেক কষ্ট করে প্রতিবন্ধী কার্ড করলে এখন পর্যন্ত কোনো ভাতা পাইনি। কেউ খোঁজও নেয়নি।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন অসহায় এই পরিবারটি।

আব্দুর রশিদের প্রতিবেশি আইভি বেগম জানান, প্রতিবন্ধী আব্দুর রশিদের পরিবার অনেক কষ্ট করে দিনাতিপাত করছেন। পরিবারটির আগের জমি-জমা থাকলেও এখন নিঃস্ব প্রায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৩১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুল হক বলেন, ‘আমার কাছে এ ধরনের কেউ কার্ড করেনি। তবে তাদের জন্য কিছু করা যায় কিনা, তা আমি চেষ্টা করব।’

শহর সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম পাইকার বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বরাদ্দের মাধ্যমে তাদের প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর