রোববার কর্ণফুলী টানেলের খনন কাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

চট্টগ্রাম, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম | 2023-09-01 08:33:42

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণ খনন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে চট্টগ্রামে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় টানেলের খনন কাজের উদ্বোধন করবেন।

জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তিন দশমিক চার কিলোমিটার দীর্ঘ ও চার লেন বিশিষ্ট টানেল নির্মাণে বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে চীন সরকার । আর বাকি টাকা বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল  থেকে বহন করবে।

সরেজমিনে টানেল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দ্রুত গতিতে চলছে টানেল স্থাপনের কাজ। পতেঙ্গায় কাজের সুবিধার্থে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা সর্বসাধারণের অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে চায়না কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি’ (সিসিসিসি)।

প্রকল্প কাজের অগ্রগতি ও সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধন ছাড়াও চট্টগ্রাম পতেঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েও উদ্বোধন করবেন।’

‘বর্তমানে প্রকল্পের কাজ ৩২ শতাংশ শেষ হয়েছে। বোরবার থেকে শুরু হবে টানেলের বোরিং। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সাল পর্যন্ত।’

চীনা সিসিসিসি ও হংকং ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অভি অরূপ অ্যান্ড পার্টনারস হংকং লিমিটেড যৌথভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন জমা দেয় ২০১৩ সালের এপ্রিলে। প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে টানেলের এই কাজ করে প্রতিষ্ঠান দুটি। এর উপর ভিত্তি করেই চীন ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে সিসিসিসি এখন টানেলের নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। বাংলাদেশের সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্প প্রতিবেদনে অনুযায়ী চার বছরের মধ্যে টানেলের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০১৪ সালে কাজ শুরু করে ২০১৭ সালে কাজ শেষ করার প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হয়। তবে চীন সরকার অর্থছাড়ের বিলম্ব করায় প্রকল্প কাজ নির্ধারিত সময়ে শুরু করা সম্ভব হয়নি।

২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরের পরে শি জিনপিং ও শেখ হাসিনা যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করেন।

প্রথমদিকে এই প্রকল্পের ব্যয় আট হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ধরা হলেও বিলম্বে কাজ শুরু করায় প্রকল্প ব্যয় এক হাজার ৪৩৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

চীনের ঋণের উপর বাংলাদেশ সরকারকে দুই শতাংশ হারে সুদ, কমিটমেন্ট চার্জ দশমিক ২০ শতাংশ ও ম্যানেজমেন্ট চার্জ দশমিক ২০ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ডেসহ ২০ বছরে পরিশোধ করতে হবে পুরো ঋণ।

নির্মাণ ব্যয়ের বাইরে টানেলের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন বাবদ দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। টানেল নির্মাণকালীন চার বছরে সুদ বাবদ ৪২৯ কোটি টাকা লাগবে।

চীনা ও বাংলাদেশি মিলে প্রায় এক হাজার ২৫০ জন শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তা কাজ করে যাচ্ছেন। সেতু বিভাগের পক্ষ  থেকে কাজ করছেন ৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।

প্রকল্পটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে চট্টগ্রামের চিত্র। আনোয়ারার সাথে চট্টগ্রাম নগরের সরাসরি সংযোগ এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ হবে। যুক্ত করা হবে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা শহরের সঙ্গে ডাউন টাউনকে।

দুইটি টিউব সম্বলিত মূল টানেল, পতেঙ্গা ও কর্ণফুলি প্রান্তের পাঁচ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও ৭২৭ মিটার ওভার ব্রিজসহ মোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ২৭ কিলোমিটার বিশিষ্ট কর্ণফুলি টানেল নির্মাণ কাজ শেষ হলে পাল্টে যাবে চট্টগ্রামের সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর