গোমতী নদীকে কুমিল্লার দুঃখ বলা হয়। সেই নদীর ভাঙন রুখতে বাঁধ দেওয়া হলেও এখন সেটা হুমকির মুখে। এই নদীতে জেগে উঠা চরে চাষাবাদে ব্যস্ত থাকেন কৃষকরা। তবে শুস্ক মৌসুমে মাটি খেকোদের অত্যাচারে হুমকির মুখে পড়েছে গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ।
জানা গেছে, জেলার অন্যতম সবজি ভান্ডার হিসেবে পরিচিত গোমতীর চরাঞ্চলের প্রায় শতাধিক স্থান থেকে অবাধে মাটি কেটে নিচ্ছে। রাত-দিন অবাধে ডাম্প ট্রাক-ট্রাক্টরে মাটি পরিবহন করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাঁধ। পাশাপাশি বায়ু দূষণে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কুমিল্লার প্রধান নদী গোমতী আদর্শ সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবীদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস হয়ে দাউদকান্দিতে মেঘনায় মিলিত হয়েছে। গোমতী প্রতিবছর বর্ষায় বিপুল পরিমাণ পলি এনে উর্বর করে চরাঞ্চল। আর সেই চরাঞ্চলে ব্যস্তসময় পার করেন নদী তীরের হাজার হাজার কৃষক। কিন্তু শুস্ক মৌসুমে আতঙ্কিত হয়ে উঠেন তারা। কারণ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে ম্যানেজ করে নদীর চর এলাকায় অবাধে মাটি কেনে নেয় একটি চক্র। প্রতিবাদ করতে গেলে হামলা-মামলার শিকার হন কৃষকরা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পুরো বছরই গোমতী নদী থেকে ড্রেজারে বালু উত্তোলন করে একাধিক সিন্ডিকেট। তবে শুস্ক মৌসুমে বালু উত্তোলন কিছুটা কমে আসলেও গোমতী তীরের আদর্শ সদর উপজেলার, টিক্কাচর, ছত্রখীল, পালপাড়া, দুর্গাপুর, আমতলী, কাচিয়াতলী, বুড়িচংএর বাবুবাজার, বাজেবাহেরচর, পূর্বহুরা ব্রাহ্মণপাড়ার রামনগর, নাল্লা খেয়া ঘাট, দেবীদ্বারের সাইচাপাড়া, কালিকাপুর, মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ, নবীয়াবাদ, সিএন্ডবি, তিতাস স্লুইসগেট, আসমানিয়া বাজার, দাউদকান্দির বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি কেটে নেয় প্রভাবশালীরা। সেই মাটি ডাম্প ট্রাক, ঢাকনাবিহীন ট্রাক্টরে করে সড়ক-মহাসড়ক দিয়ে জেলার বিভিন্নস্থানে নেওয়া হয়। এতে সড়ক বা মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে মাটি পড়ে রাস্তার ক্ষতি হয়। অবাধে মাটি কাটায় কৃষকরা স্বাভাবিকভাবে ফসল উৎপাদন করতে পারেন না।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উন্নয়ন কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘গোমতীর চরাঞ্চল কুমিল্লার সবজি ভান্ডার হিসেবে পরিচিত। এখানে জেলার মোট চাহিদার প্রায় ১৭-১৮ শতাংশ ফসল উৎপাদন হয়।’
সদর উপজেলার আমতলী, কাচিয়াতলী, বুড়িচংয়ের কাঠালিয়া, পূর্বহুরা এলাকার একাধিক কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কম’কে জানান, আগে এখানে সারা বছর চাষাবাদ করা হতো। এখন মাটি খেকোদের দাপটে চাষাবাদের জমি কমে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করলেও কোনো লাভ হয় না। এদিকে গোমতীর চর থেকে মাটি ধুলা-বালিতে বিপন্ন হচ্ছে নদী তীরের পরিবেশ, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। ডাম্প ট্রাকে মাটি বহন করায় ভেঙে পড়েছে প্রতিরক্ষা বাঁধের অনেক জায়গা। ফলে বর্ষায় নদী ভাঙনের আশঙ্কা করছেন অনেকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার প্রধান প্রকৌশলী বাবুল চন্দ্র শীল বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘নদী সম্পদ রক্ষা, রাজস্ব আদায়, নিয়ন্ত্রণ, বালু উত্তোলনের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের এখতিয়ার। আমাদের কাজ শুধু সরকারি বরাদ্দ আসলে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত করা। এর বাইরে আমাদের আর কোনো কাজ নেই।’
এ বিষয়ে জানাতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীরকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।