ছেলেমেয়ের স্বপ্নপূরণে দিনে কৃষি রাতে রিকশা

ময়মনসিংহ, জাতীয়

উবায়দুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ময়মনসিংহ, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 10:43:45

রাত সাড়ে ৩ টা। বসন্তের হিমেল হাওয়ায় রাস্তায় তখন কনকনে শীত। নগরীর মানুষ যখন শান্তির ঘুমে আচ্ছন্ন সে সময়টায় যাত্রীর খোঁজে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটছেন রিকশাচালক আইয়ুব আলী। বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই। দিনের বেলা কৃষিকাজ আর রাত হলেই ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে চলে আসেন শহরে। চাওয়া শুধু একটু বাড়তি আয়। আর তাতেই যে চলবে সংসার। আর স্বপ্ন পূরণ হবে ছেলেমেয়ের।

বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে নগরীর শ্যামাচরণ রায় রোডের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিলো আইয়ুব আলীর সঙ্গে। তিনি বললেন, 'দিনে কৃষিকাজ করি আর রাতে রিকশা চালাই। অভাবের সংসার আর ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করছে, তাদের দিকে তাকিয়েই একটু বেশি পরিশ্রম করি। তাদের দিকে যখন তাকাই যখন সব কষ্ট ভুলে যাই। তারা মানুষের মত মানুষ হলেই আমি সফল।'

অতি দরিদ্র পরিবারে জন্ম আইয়ুব আলীর। মুক্তাগাছা উপজেলার রামভদ্রপুর গ্রামে নিজেদের বসতভিটা আর দুই শতাংশ জমি ছাড়া আর কিছুই নেই। নিজে কোনো পড়াশোনা করতে পারেননি। কিন্তু স্বপ্ন দেখেছেন সন্তানদের পড়াশোনা শিখিয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। মানুষের মত মানুষ করবেন।

মানুষটির চোখে যেন স্বপ্নের এক আশ্চর্য সংসার। সেই চোখ শুধু স্বপ্নই দেখে না, তাকে সাফল্যের সুনির্দিষ্ট ঠিকানাও চিনিয়ে দেয়। তাইতো বাবার স্বপ্ন পূরণে অনেক দূর এগিয়ে গেছে ছেলে হুমায়ূন কবীর ও মেয়ে হোসনে আরা।

আইয়ুব আলী জানালেন, তার ছেলে হুমায়ুন পড়াশোনা করছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে আর মেয়ে পড়াশোনা করছে মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজে।

তিনি বলেন, 'ছেলের খুবই ইচ্ছা ছিল ডাক্তারি পড়াশোনা করবে। সেজন্য অনেক কষ্টও করেছে সে। আমি গরিব মানুষ, সবার বাবার মতো তো আমি সব কিছু দিতে পারিনি কখনো। তবুও সে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। আর মেয়েটা অনার্সে পড়ছে, তার ইচ্ছা সে বিসিএস ক্যাডার হবে। তাই শত কষ্টের মাঝে যখন ছেলেমেয়ের মুখের দিকে তাকাই তখন কোন কষ্টই কষ্ট মনে হয় না, সব ভুলে যাই।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর