চলে গেলেন ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ পলান সরকার

রাজশাহী, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট, রাজশাহী, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 01:36:59

‘আলোর ফেরিওয়ালা’, ‘সাদা মনের মানুষ’, একুশে পদকপ্রাপ্ত পলান সরকার আর নেই। শুক্রবার (১ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহীর নিজ বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। কিছু দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি।

পলান সরকার ১৯২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নাটোরের বাগাতিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের পর নাম ছিল হারেজ উদ্দিন সরকার। তবে তাঁর মা তাঁকে ‘পলান’ নামে ডাকতেন।

মাত্র পাঁচ মাস বয়সে তাঁর বাবা হায়াত উল্লাহ সরকার মারা যান। চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর অর্থনৈতিক সংকটে লেখাপড়া বন্ধ করে দেন। এরপর তাঁর নানা ময়েন উদ্দিন সরকার মা মইফুন নেসাসহ পলান সরকারকে রাজশাহীর বাঘা থানার বাউসা গ্রামে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন পলান সরকার।

ছোটবেলায়ই তিনি বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলেন। অন্যদেরও বই পড়তে উৎসাহ দিতেন। ১৯৯০ সাল থেকে বাউসা হারুন অর রসিদ শাহ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিবছর যারা মেধাতালিকায় প্রথম দশটি স্থান অর্জন করতো, তাদের বই উপহার দিতেন পলান সরকার।

এরপর অন্য শিক্ষার্থীরাও তাঁর কাছে বইয়ের আবদার করলে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি তাদেরও বই দেবেন, তবে তা ফেরত দিতে হবে। এক সময় গ্রামের মানুষও তাঁর কাছে বই চাইতে শুরু করে। এভাবেই শুরু হয় বই পড়ার আন্দোলনের ভিত।

১৯৯২ সালে ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত হওয়ায় পলান সরকারকে হাঁটার অভ্যাস করতে হয়। তখনই তাঁর মাথায় এক অভিনব চিন্তা আসে। তিনি স্কুলকেন্দ্রিক বই বিতরণের প্রথা ভেঙে বাড়ি বাড়ি বই পৌঁছে দেওয়া এবং ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে অন্যান্য জিনিসের পাশাপাশি তিনি বইও উপহার দিতেন। এছাড়া যারা তাঁর চাল-কলে দেনা পরিশোধ করে তাদেরও তিনি বই উপহার দিতেন।

প্রথমে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মানুষই জানতো পলান সরকারের এই অসামান্য শিক্ষা আন্দোলনের গল্প। ২০০৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে পলান সরকারকে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ হিসেবে তুলে ধরা হয়। এরপর থেকে তিনি এই উপাধিতে পরিচিতি পান।

২০০৯ সালে রাজশাহী জেলা পরিষদ তাঁর বাড়ির আঙিনায় একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করে। সমাজসেবায় অবদানের জন্য ২০১১ সালে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান ‘একুশে পদক’ লাভ করেন পলান সরকার। ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ‘ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম ডে’ উপলক্ষে সারা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার দৈনিকে তাঁর উপর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

তাঁর জীবনের ছায়া অবলম্বনে বিটিভির জন্য গোলাম সারোয়ার দোদুল নির্মাণ করেন ঈদের নাটক ‘অবদান’। বিনামূল্যে বই বিতরণ করে সবার মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি করার জন্য ‘ইউনিলিভার বাংলাদেশ’ পলান সরকারকে ‘সাদা মনের মানুষ’ খেতাবে ভূষিত করে।

পলান সরকার নয় সন্তানের জনক। এদের মধ্যে ছয়জন ছেলে, তিন মেয়ে। কিছু দিন আগে তাঁর স্ত্রী মারা গেছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর