মুনাফালোভীদের হাতে অনিরাপদ খাদ্য, অসহায় ভোক্তারা

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 06:06:13

রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি হিমাগারে অভিযান চালায় র‌্যাব-২ এর একটি দল। অভিযানে র‌্যাব ১ হাজার ৫০০ মণ মেয়াদোত্তীর্ণ মাছ ও মাংস জব্দ করে।

এর কয়েকদিন আগে র‌্যাব আরও দুইটি হিমাগারে অভিযান চালায়। সেই অভিযানে শিকাজু হিমাগার ও দেশি সুপার অ্যাগ্রো লিমিটেডকে মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্য রাখার দায়ে ৪৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ১৮ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও দিয়েছিল র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

অভিযান শেষে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এসব মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্য রাজধানীর বিভিন্ন নামিদামি সুপারশপ, হোটেল ও রেস্তোরাঁয় নিয়মিত সরবরাহ করা হত।

এই অভিযান ছাড়াও ভেজাল খাদ্যের কারবারিদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের পক্ষ হতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযানে দেখা গেছে, বিদেশ থেকে আমদানি করা মাছ মাংস, ফলসহ নানা মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্য সামগ্রী হিমাগারে মজুদ রাখা হয়েছে। মজুদ করা খাদ্য নতুন মোড়কে প্যাকেজিং  করে পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন নামিদামি সুপারশপ, হোটেল-রেস্তোরাঁয়। শুধু তাই নয় রাজধানীর এসব নামিদামি হোটেল রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন সময় পচা-বাসি  খাবার বিক্রির প্রমাণও পাওয়া গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, তারা অভিযানের সময় নিজেদের ভেজালমুক্ত প্রমাণ করতে নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরের স্টিকার নকল করে খাবারের প্যাকেটে লাগিয়ে রাখেন।

র‌্যাবের অভিযানের পর অনেক ক্রেতার মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, নিজের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে যে খাবার বা খাদ্যজাত পণ্যটি কিনছেন তা ভেজালমুক্ত কিনা?

অনেকেই আবার সুপারশপ থেকে খাবার বা খাদ্যজাত পণ্য কিনে মনে মনে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেন। তারা ভাবেন, বেশি টাকা দিয়ে হলেও পরিবারের জন্য ভেজালমুক্ত খাদ্য কিনতে পেরেছেন। কিন্তু নানা অভিযানে দেখা গেছে, এসব সুপারশপগুলোতেই সব থেকে বেশি পচা বাসি ও মেয়াদোত্তীর্ণ  খাবার বিক্রি হচ্ছে।

তাহলে এখন প্রশ্ন উঠে, দেশের ভোক্তারা কয়েকগুণ বেশি দাম দিয়েও ভেজাল মুক্ত খাবার পাচ্ছেন কিনা। নৈতিকতা বহির্ভূত এসব ব্যবসায়ীদের কাছে ভোক্তারা কি বন্দি? তাহলে দেশের মানুষ নিরাপদ খাদ্য পাবে কোথায়?

বিশ্লেষকরা বলছেন নিয়মিত মনিটরিং এর অভাবে এক শ্রেণির অস্বাদু ব্যবসায়ী ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ  খাদ্য বাজারে সরবরাহ করে যাচ্ছেন। এছাড়া একটি মাত্র  সংস্থা ছাড়া ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কার্যকরী ভূমিকা নিতে প্রশাসনের কাউকে দেখা যায়না। ফলে ব্যবসায়ীদের স্পর্ধা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে এবং তারা পচাবাসি খাবার দিয়ে বাজার পূর্ণ করে দিচ্ছেন।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ক্যাব) সভাপতি ড. গোলাম রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা দীর্ঘ দিন ধরে এ বিষয়ে কথা বলে আসছি। লোভী ব্যবসায়ীদের আটকাতে প্রশাসনকে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাদেরকে নিয়মিত মনিটরিং করে এসব জঘন্য অপরাধের জন্য শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার নিয়ে র‌্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের এ অভিযানের মাধ্যমে যে রাতারাতি সব কিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে বিষয়টি এমন নয়। কিন্তু এসব অপরাধ করে যারা মানুষ ঠকায় তাদের মনে একটি ভয়ের সঞ্চার হবে। তবে একটা সময় গিয়ে এ অভিযানের ফল পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, সামনে রমজান আমরা চেষ্টা করব এই মাসে যেন মানুষ ভেজাল মুক্ত খাবার পায়। গত সপ্তাহের ৭ দিনের মধ্যে প্রায় ৫ দিনই অভিযান চালিয়েছি। অনেক সময় বাধাবিপত্তি আসে, তার পরেও অভিযান চালবে।

অন্যদিকে মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ  ভেজাল খাদ্য গ্রহণের কারণে নানা শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন পুষ্টি বিজ্ঞানীরা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক নাজমা শাহীন বার্তা২৪.কমকে বলেন, নির্দিষ্ট তারিখের পর কোনো ধরণের খাবার গ্রহণ করলে তা মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনে। মেয়াদোত্তীর্ণ খাবারের কারণে শারীরে ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর