স্ত্রীর কবরের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত 'আলোর ফেরিওয়ালা' পলান সরকার।
শনিবার (০২ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে ‘পলান সরকার পাঠাগার’ এর পাশে অবস্থিত পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে রাজশাহীর বাঘার বাউসা হারুনুর রশিদ শাহ দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে পলান সরকারের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এই স্কুলেরই ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন পলান সরকার।
জানাজার নামাজে ইমামতি করেন বাঘার বাউসা পূর্বপাড়া জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ আবুল বাশার।
তাঁর জানাজা নামাজে অংশ নেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদের, রাজশাহী পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্লাহ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন রেজা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাবা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শামসুদ্দীন, সরের হাট এতিমখানার পরিচালক সাদা মনের মানুষ শামসুদ্দিন সরকার, সদ্য নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাবলু, বাঘা পৌরসভার মেয়র আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক মেয়র আক্কাস আলী প্রমূখ। এছাড়াও তার জানাজায় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
শুক্রবার (১ মার্চ) বেলা ১২টা ১০ মিনিটে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের পূর্বপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর।
পলান সরকার বার্ধক্যজনিত রোগে শয্যাশায়ী ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি ছয় ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে গেছেন। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর পলান সরকারের স্ত্রী রাহেলা বেগম (৮৫) মারা যান।
জানা যায়, সামাজিকভাবে অবদান রাখার জন্য পলান সরকার ২০১১ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান 'একুশে পদক'। তিনি রাজশাহী জেলার ২০টি গ্রামে গড়ে তুলেছিলেন অভিনব শিক্ষা আন্দোলন। আগ্রহের কারণে ২০০৭ সালে সরকারিভাবে তার বাড়ির আঙিনায় একটি পাঠাগার করে দেওয়া হয়।
নিজের টাকায় বই কিনে তিনি পড়তে দিতেন পিছিয়ে পড়া গ্রামের মানুষকে। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাঁধে ঝোলাভর্তি বই নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন।
মাইলের পর মাইল হেঁটে একেকদিন একেক গ্রামে যেতেন। বাড়ি বাড়ি কড়া নেড়ে আগের সপ্তাহের বই ফেরত নিয়ে নতুন বই পড়তে দিতেন। এলাকাবাসীর কাছে তিনি পরিচিত ‘বইওয়ালা দুলাভাই’ হিসেবেও।
পলান সরকার ১৯২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম হারেজ উদ্দিন। জন্মের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় তার বাবা মারা যান।
আর্থিক টানাপড়নে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয় তাকে। স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতিও ছিলেন একুশে পদক প্রাপ্ত পলান সরকার।
পলান সরকার ছিলেন বই পাগল মানুষ। ডায়াবেটিস ধরা পড়ায় হেঁটে হেঁটেই তিনি বই বিলি করতেন। একটানা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এই কাজ করেছেন তিনি।
২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ‘ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম ডে’ উপলক্ষে সারা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার দৈনিকে তার ওপর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর আগে তাকে নিয়ে আসা হয় জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে। এছাড়া তাকে নিয়ে ‘সায়াহ্নে সূর্যোদয়’ নামে একটি নাটকও তৈরি হয়েছে।