উত্তরাঞ্চলে সীমান্তবর্তী জেলায় বাড়ছে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত রোগী

রংপুর, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 03:15:26

উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বাড়ছে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ফলে আতঙ্কের সাথে সাথে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১৬ দিনের ব্যবধানে ঠাকুরগাঁওয়ে অজ্ঞাত রোগে মারা যান মা-বাবা এবং দুই সন্তানসহ একই পরিবারের ৫ জন। একই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ওই পরিবারের আরো ৪ জন। বর্তমানে তারা রংপুর মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

অজ্ঞাত রোগের বিষয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ডা. অজয় রায় বার্তা২৪.কম’কে ‘অতিরিক্ত দূষণ, রাসায়নিক মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য ও চোরাই পথে পার্শ্ববর্তী দেশে যাতায়াতের ফলে অজ্ঞাত এসব রোগ সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। যার বেশির ভাগই ভাইরাসজনিত।’

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর অসুস্থ ৪ জনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকা থেকে আসা চিকিৎসকরা রোগীর রক্তসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যাবে তারা কী ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৮ বছরে শুধু রংপুর বিভাগে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৭০ জন। তাদের বেশির ভাগ সীমান্তবর্তী জেলার বাসিন্দা। আক্রান্তদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি লালমনিরহাটে ৩৯ জন, দিনাজপুরে ১৭ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ৯, রংপুরে ২ ও কুড়িগ্রামে একজন।

আরো জানা গেছে, ২০১১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অজ্ঞাত রোগে ১৩ জন মারা যান। এ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছিলেন আরো ১৪ জন। পরে রামেকের একটি বিশেষ দল রোগটি এনসেফালাইটিস ভাইরাসের আক্রমণ বলে শনাক্ত করে। ২০১৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বরে অজ্ঞাত রোগে মারা যান লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার চন্দনপাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু সাঈদের পরিবারসহ ১২ জন। আক্রান্তদের সবার মাথা ব্যথা, জ্বর জ্বর ভাব, শরীর দুর্বল, অসংলগ্ন কথা ও প্রচণ্ড ঘুমের লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। ওই সময় চিকিৎসকরা এ রোগকে প্রাথমিকভাবে ‘সিডেশন উইথ সাইকোসিস’ বলে উল্লেখ করেন।

২০১৫ সালের জুনে দিনাজপুরে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ১১ জন। ওই সময় আক্রান্ত হয়েছিলেন আরো ৫ জন। আক্রান্তদের প্রচণ্ড খিঁচুনি, কাঁপুনিসহ নিস্তেজ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে চিকিৎসকরা এ রোগের কারণ জানতে পারেননি।

২০১৬ সালে মার্চ মাসে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার আব্দুল্লাহপুর কালসারডাড়া গ্রামে হাতে-পায়ে গাছের মতো শিকড় গজানো বিরল রোগে আক্রান্ত বাবা-ছেলের সন্ধান পাওয়া যায়। তাদের রংপুর থেকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এ রোগ থেকে মুক্তি মেলেনি। বর্তমানে তাজুল ইসলাম (৪৮) ও তার ছেলে রুহুল আমিন (১০) অজ্ঞাত এ রোগে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। তাজুল ইসলাম জন্মের পর থেকে এ রোগে আক্রান্ত হন। বংশপরম্পরায় তারা এ রোগে ভুগছেন। তার বাবা আফাস মুন্সি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

এছাড়া ২০১৭ সালের আগস্টে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হন কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার জুম্মাপাড়া এলাকার দিনমজুর শফিকুল ইসলাম ও গৃহিণী শাহিদা বেগমের মেয়ে সুরভী খাতুন (৬)। প্রায় ৬ মাস আগে তার শরীরে বাসা বাঁধে অজ্ঞাত রোগ। চিকিৎসকরা তার রোগ শনাক্ত করতে পারেননি। বর্তমানে তার শরীরের ওজন কমে ১৬ কেজিতে দাঁড়িয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর