গুরুতর অসুস্থ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে এসেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওয়ানডের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
রোববার (৩ মার্চ) রাত ৯ টা ১০মিনিটে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌঁছান নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য।
হাসপাতালে পৌঁছে মাশরাফি ডি ব্লকের কার্ডিওলজি বিভাগের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করতে উঠে যান।
এদিকে রাত পৌনে আটটার দিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে ঢাকায় পৌঁছানো সিঙ্গাপুরের চার সদস্যদের প্রতিনিধি দল হাসপাতালে ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। এরপর তারা এই হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন।
এদিকে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার ব্রিফিংয়ে বিএসএমএমইউ-এর কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান জানান, লাইফ সাপোর্টে থাকা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চোখ খুলে সাড়া দিলেও এখন ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আছেন।
তিনি বলেন, 'ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার এখনো তেমন উন্নতি হয়নি। তিনি পা নাড়াতে পারছেন, চোখও খুলছেন। তবে তার শারীরিক অবস্থা এখনো ক্রিটিক্যাল।'
চিকিৎসার শুরু থেকে সকল বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'ওবায়দুল কাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর যা যা চিকিৎসা দেওয়া দরকার, সেগুলো তাকে দিয়েছি। তারপর তাকে নিয়ে আসা হয় ক্যাথ ল্যাবে। এনজিওগ্রাম করে দেখা গেল, তার তিনটি আর্টারি ব্লকড। তার আগে থেকেই ডায়াবেটিস ছিল, সেটাও অনিয়ন্ত্রিত ছিল, অনেক বেশি হয়ে গিয়েছিল।'
আলী আহসান বলেন, 'তার ব্লক হওয়া তিনটি রক্তনালীর মধ্যে বাম পাশের যেটা হৃদযন্ত্রের দুই-তৃতীয়াংশ রক্ত সরবরাহ করে, যেটাকে আমরা এলএডি আর্টারি বলি, সেটা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। সেটা খুলে দিলেই হয়তো উন্নতি হবে।'
তিনি বলেন, 'প্রাথমিকভাবে পিসিআইয়ের মাধ্যমে তার ওই ধমনিতে রিং পরিয়ে ব্লকটি খুলে দেওয়া হয়। এরপর তিনি দুই ঘণ্টার মতো ভালো ছিলেন। তারপর দেখা গেছে, রক্তচাপ কিছুটা কমে যাচ্ছে, আবার কিছুটা বেড়ে যাচ্ছে। সবার সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আইবিপি প্রতিস্থাপন করা হবে, এই যন্ত্র রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রিত রাখে।'
সর্বশেষ অবস্থা প্রসঙ্গে অধ্যাপক আলী আহসান বলেন, 'আইবিপি প্রতিস্থাপনের পর তিনি চোখ খুলছেন, কথা বলছেন, কিন্তু ক্রিটিক্যাল অবস্থাতে আছেন। তিনি পা নাড়ছেন, চেষ্টা করছেন কথা বলার। এই অবস্থাতেই তিনি আছেন। হেমোডাইনামিক্যাল স্ট্যাবিলিটি যদি আরও কিছু সময় থাকে, চিকিৎসার জন্য আমাদের সিদ্ধান্ত হবে দুইটি; মেডিক্যাল থেরাপিতে যেতে পারি অথবা বাইপাস সার্জারি করতে পারি। এছাড়াও তার অন্যান্য আর্টারি যেগুলোতে ব্লক রয়েছে, সেগুলো খুলে দেওয়ার জন্য বাইপাস করতে পারি।'
তিনি আরও বলেন, 'সময়ের সঙ্গে তার শারীরিক অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি আগেই বলেছি, ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা না গেলে কিছুই বলা যাবে না। উনি এখনও ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আছেন। আমি তার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করছি। এই অবস্থায় তাকে দেশের বাইরে পাঠাতে গেলে তার শারীরিক অবস্থা আনস্ট্যাবল হতে পারে। সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসক দল আসছেন। তারা যদি মনে করে, যে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও জনবল আছে, তাহলে তারা নিয়ে যেতে পারবেন।'