অদক্ষতা-অব্যবস্থাপনার সাথে অসতর্কতাও দুর্ঘটনায় দায়ী

ঢাকা, জাতীয়

মুজাহিদুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-12-21 20:39:52

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে একদিকে যেমন চালকের অদক্ষতা, সড়কে অব্যবস্থাপনা রয়েছে, অপরদিকে পথচারীদেরও রয়েছে সতর্কতা ও সচেতনতার অভাব। অসচেতনতার জন্য প্রতিনিয়তই ঝরে পড়ছে অজস্র তাজা প্রাণ। কেউবা আবার পঙ্গুত্ব বরণ করছেন সারা জীবনের জন্য।

সড়ক দুর্ঘটনা কেন ঘটে এবং তা থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায়- এসব বিষয়ে বার্তা২৪.কম এর কথা হয় বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজের সঙ্গে।

তিনি জানান, শহরে দুর্ঘটনাগুলো ঘটে সাধারণত যাত্রী নিতে বিভিন্ন কোম্পানির বাসের মধ্যকার প্রতিযোগিতা, সড়কের নিয়ম মেনে না চলা, ফুটপাত দখলে থাকা, যত্রতত্র রাস্তা পারাপারের কারণে।

সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে সাবেক নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে সভাপতি করে ১৫ সদস্যের সুপারিশমালা প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। সহযোগী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ সেই কমিটির অন্যতম সদস্য।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশমালা প্রণয়নের কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ১৫ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। আমরা একটি সুপারিশ দেব। এটা প্রণয়নের কাজ চলছে। বিভিন্ন সংস্থা তাদের সুপারিশগুলো দিচ্ছে, সবগুলো সমন্বয় করে তা প্রস্তুত করা হবে।’

বাস কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ উল্লেখ করে কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘শহরাঞ্চলের দুর্ঘটনার বড় কারণ হলো একই কোম্পানির অনেক বাস একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। ঢাকা শহরে ফুটপাতগুলো চলাচলের উপযোগী না, ফলে মানুষজন রাস্তায় নেমে পড়েন। এতে গাড়ির সঙ্গে মানুষের সংঘর্ষের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘যত্রতত্র রাস্তা পার হওয়ার অভ্যাস আমাদের রয়ে গেছে। হাত তুলে চলন্ত গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পার হতে চাই। ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস ব্যবহার করি না।’

মহাসড়কের দুর্ঘটনার কারণ উল্লেখ করে বুয়েটের এই সহযোগী অধ্যাপক বলেন, ‘অধিকাংশ মহাসড়কে দুই লেনের আন ডিভাইডেড রাস্তা। এর ফলে খুব সহজেই এক দিকের গাড়ি বিপরীত লেনে চলে যেতে পারে। ওভারটেকিং করতে গিয়েও দুর্ঘটনার শিকার হয়। অবৈধ রিজিওনাল সড়ক, মহাসড়কে ভূমি ব্যবস্থাপনা না থাকা, অপরিকল্পিতভাবে স্কুল কলেজ, হাট বাজার গড়ে তোলাও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে করণীয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনা কমাতে চাইলে আমাদের চালকদের দক্ষতা বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে। বাসগুলোর কোম্পানিভিত্তিক সিস্টেমকে পরিবর্তন করতে হবে, বাসগুলোকে ফ্রাঞ্চাইজিতে চলে আসতে হবে, এতে চালকদের বেপরোয়া প্রতিযোগিতা কমিয়ে আনতে পারবো। পথচারীবান্ধব শহর করতে হবে, ফুটপাত দখলমুক্ত, পরিচ্ছন্ন করতে হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে যদি স্কুল থাকে, সেটাকে স্কুল জোনিং বলা হয়। সেই স্কুল জোনিং পদ্ধতিকে ব্যবহার করতে হবে। মহাসড়কে লেন বাড়ানো ও ডিভাইডার দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ছোট গাড়ির জন্য সার্ভিস রোড করে দিতে হবে, যাতে করে ছোট গাড়ি মহাসড়কে আসতে না পারে। মহাসড়কের প্রতি পাঁচ কিলোমিটার পর পর গ্রেট সেপারেশন কানেকশন দেওয়া যেতে পারে, যাতে তারা ক্রস করতে পারে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর