মন্ত্রী হয়েও এমপির বাসা দখলে রাখলে ৮০ হাজার টাকা কর্তন

ঢাকা, জাতীয়

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-19 03:25:08

একাদশ জাতীয় সংসদ গঠনের পর মন্ত্রী পরিষদে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। দশম সংসদের অধিকাংশ মন্ত্রীর এবার ঠাই হয়নি নতুন মন্ত্রিসভায়। তাই নতুন যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তাদের মন্ত্রিপাড়ার বাসভবনে চলে যাওয়ার কথা। তাদের জন্য মন্ত্রিপাড়ায় আলাদা বাসা রয়েছে।

একাদশ সংসদ গঠনের প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হতে চললেও এখনও এমপি হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া বাসা ছাড়েননি প্রায় ১০ থেকে ১২ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। নাখাল পাড়ায় এমপিদের জন্য বরাদ্দ করা ভবনেই বসবাস করছেন তারা। এতে নতুন এমপিদের বাসা বরাদ্দে হিমশিম খাচ্ছে সংসদ সচিবালয়।

এমপিদের বাসা-অফিস সংক্রান্ত বিষয়াদি দেখভাল করে সংসদ কমিটি। এই কমিটির সভাপতি পদাধিকার বলে জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ। একাদশ জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী এমপি হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া বাসা ছেড়ে দেওয়ার জন্য ওই সব মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের গত ২৫ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়েছেন।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দশম জাতীয় সংসদের একজন সদস্য হিসেবে আপনার নামে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ/নাখালপাড়ার ....নং ফ্ল্যাটটি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছিল। একাদশ জাতীয় সংসদেও আপনি পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন এবং মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রী পদমর্যাদা সম্পন্ন পদে নিযুক্ত হয়েছেন।

‘ইতোপূর্বে আপনার নামে বরাদ্দকৃত মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ/নাখালপাড়াস্থ ...নং ফ্ল্যাটে বসবাস করতে আগ্রহী হন তাহলে সরকার থেকে প্রাপ্য নির্ধারিত বাড়ি ভাড়ার মন্ত্রীদের জন্য ৮০ হাজার টাকা এবং প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রীদের জন্য ৭০ হাজার টাকা সম্পূর্ণ অংশ সংসদ সদস্য ভবনের ফ্ল্যাটের ভাড়া বাবদ পরিশোধ করার শর্তে আপনাকে দুই দিনের মধ্যে আবেদন করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু এপর্যন্ত কোন আবেদন পাওয়া যায়নি।’

‘মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীদের গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এমপি হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া বাসা খালি করে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। অন্যথায়, সরকার থেকে প্রাপ্য উল্লেখিত বাড়ি ভাড়া পারিতোষিক ও ভাতাদি থেকে ১ মার্চ হতে কর্তন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

তবে, এই চিঠি পাওয়ার পরেও এখন পর্যন্ত ১০-১২ জন পূর্বের বাসা দখলে রেখেছেন। অনেকেই টেলিফোনে আরও কয়েকদিন সময় চেয়েছেন। তবে লিখিতভাবে কেউ কিছু বলেননি। অনেক মন্ত্রীর পিএস সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট দফতরে ফোনে চলতি মাসের ১৫ মার্চ পযর্ন্ত সময় চেয়েছেন।

এ বিষয়ে চীফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে টেলিফোনে বলেন, দশম সংসদের এমপিদের মধ্যে যারা এবার মন্ত্রী হয়েছেন তারা মন্ত্রিপাড়ার বাসায় উঠবেন। সেখানে বাসা বরাদ্দে একটু সময় লাগাতে এখানে ছেড়ে যেতে সময় লাগছে। আশা করি, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই সবাই বাসা ছেড়ে দেবেন। তাছাড়া পুরনো মন্ত্রীগণ বাসা ছাড়ার পরেও নতুনদের বাসা বুঝে পেতে একটু সময় লাগে। সেই সময়টুকু হয়তো নিচ্ছেন।

এমপি হিসেবে বরাদ্দকৃত বাসা দখলে রাখাদের মধ্যে রয়েছেন তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ। তিনি থাকতেন নাখালপাড়ার ২নং ভবনের একটি ফ্ল্যাটে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জামেল হক দশম সংসদে মন্ত্রিপড়ায় এবং নাখালপাড়ার এমপিদের জন্য বরাদ্দকৃত বাসায়ও থাকতেন। তার দখলে দু’টি বাসা থাকলেও এবার নাখালপাড়ার বাসাটা ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে।

দখলে রাখা অন্যদের মধ্যে রয়েছেন রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তিনি নাখালপাড়া ৬নং ভবনের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। নাখালপাড়ার ২নং ভবনে থাকেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়নও এমপি হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া পূর্বের বাসাতেই থাকেন। এরকম ১০-১২ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী পূর্বের বাসা দখলে রেখেছেন।

এদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রীর পিএস সংসদের সংশ্লিষ্ট শাখায় ফোন করে আরও পাঁচ দিন সময় চেয়েছেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর দফতর থেকেও কয়েক দিন সময় চাওয়া হয়েছে। অন্যরাও আরও কিছু দিন সময় চেয়েছেন।

এ বিষয়ে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে কয়েক জনের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর