১৪ দলকে অবহেলা করা হবে আত্মঘাতী, সংসদে ইনু

ঢাকা, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 08:16:45

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসলেও মন্ত্রিসভায় শরীকদের কাউকেই স্থান দেওয়া হয়নি। তাই অনেকটা ক্ষোভ ঝাড়লেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু।

তিনি বলেছেন, মহাজোট ১৪ দলের ঐক্যের শক্তিতে বিজয়ী হওয়ার পর ঐক্যকে কার্যকর রাখতে পারেনি। পরাজিত শক্তির পুনরুত্থান বন্ধে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং ঐক্য নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। মহাজোটে ১৪ দলকে অবহেলা করা হবে আত্মঘাতী।

বুধবার (৬ মার্চ) রাতে জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ছোটদের আড়ি আড়ি খেলার মত ফরমায়েশি বিরোধী দলের স্বীকৃতি সংসদকে প্রাণবন্ত করবে না বলেও মন্তব্য করেন হাসানুল হক ইনু। সংসদীয় কমিটিগুলোকে শক্তিশালী করা এবং স্থানীয় সরকারকে প্রভাবমুক্ত রাখার দাবি তিনি।

জাসদ সভাপতি বলেন, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনকে অমীমাংসিত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। তারা একাদশ সংসদ নির্বাচনকে বিতর্কিত হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিএনপির যারা ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনকে অমীমাংসিত করতে চাইছে, রাজনৈতিক সংশয় আর বিভান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে, তারা নতুন করে ষড়যন্ত্রের বিষ বাংলার মাটিতে বপন করতে চাইছে। যে কোনো নির্বাচনে অনিয়ম ঘটে, বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ঘটনাকে ঢালাওভাবে বড় করে দেখিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাতিল করার অপচেষ্টা অবশ্যই উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

তিনি বলেন, নির্বাচনে ৪০ হাজারের বেশি ভোট কেন্দ্র ছিল, মাত্র ২৫টির মত কেন্দ্রে বিতর্কিত ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া কোনো ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনে অনিয়ম আবিষ্কার করার একটা অপচেষ্টা চলছে। ঐকফ্রন্ট গণশুনানি করেছে। এটা গণঘুমের শুনানিতে পরিণত হয়েছে। কাল্পনিক অভিযোগের ফিরিস্তি তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ যেন আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখার মত।

ইনু বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন কোনো মাপকাঠিতে মাপা যাবে। এটাকে ২০০১-২০১৮ সালের রাজনৈতিক ধারাবাহিকতায় দেখতে হবে। জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনের যে যুদ্ধ, সে যুদ্ধের চশমা দিয়ে এ নির্বাচনকে দেখতে হবে। জঙ্গি দমনের ভেতর সাংবিধানিক প্রক্রিয়া রক্ষা করা, নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সচল রাখা, অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রাখার মত বিষয় শেখ হাসিনাকে করতে হয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনও সেই জঙ্গি দমনের যুদ্ধের ভেতরে সংঘটিত হয়েছে। নির্বাচনের আগের ছয় মাস কী ছিল, তা দেখলেই বোঝা যায়, কোন পরিস্থিতিতে আমাদের এ নির্বাচন পরিচালনা করতে হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতকে নিয়ে ড. কামাল হোসেন সরকার বিরোধী সকল দল, ব্যক্তি ও দলছুট ব্যক্তিদের নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট তৈরি করে। একটির পর একটি হুমকি-ধামকির ভেতর দিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করা হয়েছিল। আদৌ নির্বাচন হবে কি-না, তা নিয়ে সংশয়-সন্দেহ দেখা দিয়েছিল। তাদের কথাবার্তা ভাব-সাব হুমকি-ধামকি, সবকিছু নিয়ে এমন একটা অবস্থা তৈরি করা হয়েছিল, যেন গায়েবি কোনো শক্তির তাণ্ডবে পুরো নির্বাচন ভণ্ডুল হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, তারা কোনো এক অদৃশ্য গায়েবি শক্তির আশায় ছিল, তারা তাদের বিজয়ী করে দেবে। গায়েবি শক্তির আশায় বসে থাকা এবং কেন্দ্র থেকে নির্বাচনের কোনো নির্দেশনা না পাওয়া এবং ঐক্যফ্রন্টের তর্জন গর্জন ফাঁকা বুলিতে পরিণত হওয়ায় মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা হতাশায় পড়েন। সে কারণেই বিএনপির এই ভরাডুবি। এর জন্য দায়ী কি নির্বাচন কমিশন? সরকার? না-কি জনগণ?

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটা ওয়ান পার্টি স্টেট নয়, এটা মাল্টি পার্টি ডেমোক্রেসি সেকুলার স্টেট। এজন্য জঞ্জাল পরিষ্কার করে অসাম্প্রদায়িক দেশ বিনির্মাণের কাছ থেকে এক দলীয় শাসন হিসেবে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু বহুদলীয় শাসনের নামে রাজাকার আলবদরদের শাসন হালাল করা যায় না। শক্তিশালী বিরোধী দল মানে ভাড়া করে রাজাকার আলবদরদের তুলে এনে জামাই আদর করে বিরোধী দলের আসনে বসানো গণতন্ত্র নয়।

সরকারের কিছু সমালোচনা করে হাসানুল হক ইনু বলেন, সাফল্যের পরও ক্ষেত্র বিশেষে কিছু ঘাটতি রয়েছে। আইনের শাসন, সুশাসনে ঘাটতি রয়েছে। দলবাজি ক্ষমতাবাজি দমনে খাটতি রয়েছে। ঘাটতি নিয়ে আমরা নতুন পাঁচ বছরে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। কওমী মাদরাসাকে রাষ্ট্রীয় নজরদারিতে আনার প্রশংসা করছি। তবে তেতুল কর্তাকে প্রশ্রয় দেওয়া আত্মঘাতী। আমি এতে সমর্থন করি না। জঙ্গি মাদককে যেমন কোনো রকম ছাড় দেওয়া যায় না, তেমনি তেতুল কর্তাকেও কোনো রকম ছাড় দেওয়া যায় না। তা অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধ্বংস করে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর