‘লক্ষ্য পূরণে তরুণদের একাগ্র হয়ে কাজ করতে হবে’

চট্টগ্রাম, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 03:10:25

কেউ জানতে চেয়েছেন মেয়র হওয়ার গল্প, কেউবা তৃণমূল থেকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পেছেনের কথা। কেউবা জানতে চেয়েছেন চট্টগ্রাম নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। এসবের উত্তর দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

শনিবার (৯মার্চ) ‘দৃষ্টি আড্ডা সাথে নগরপিতা’ শীর্ষক তারুণ্য সংলাপে মেয়রের সঙ্গে এক ছাদের নিচে মিলিত হয়েছিলেন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। গল্প আর আড্ডায় সময় পার করেছেন তারা। নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে এমন ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সামাজিক সংগঠন দৃষ্টি।

নগরীর বিভিন্ন স্থানে শিশুরা পড়ালেখার সুযোগ না পেয়ে ভিক্ষাসহ নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, এ ক্ষেত্রে মেয়রের পরিকল্পনার কথা জানতে চান ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সীমা চক্রবতী।

এ সময় নাছির উদ্দিন বলেন, ‘এর পেছনে যৌক্তিক অনেক কারণ রয়েছে। অনেক পরিবার চিন্তা করে তার ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা করালে আরও অর্থ ব্যয় হবে। এ ক্ষেত্রে তারা সন্তানদের কাজে নামিয়ে দিচ্ছে। অনেকে গরীব বলে করছে না, এটা স্বভাব হয়ে গেছে তাই করছে। বিগত কয়েকবছর আগেও ৭৮ শতাংশ লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে অবস্থা করতো। বর্তমানে এ সংখ্যা ২১ শতাংশে নেমে এসেছে। আমি মেয়র হিসেবে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকার সম্মানি নেই না। কিন্তু সরকারিভাবে নিয়ম রয়েছে এই টাকা তুলতে হবে। আমি টাকাটা কখনো স্পর্শ করিনি। অনাথ, প্রতিবন্ধী শিশুদের মাঝে বিতরণ করেছি। আমি চেষ্টা করছি শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে।’

স্কুল-কলেজ শেষে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, সেই সাথে গণপরিবহনে মেয়েদের হয়রানি, ঝামেলা পোহাতে হয়। মেয়েদের জন্য আলাদা পরিবহন চেয়ে ইসরাত জাহান শুসমিতা নামের এক স্কুল শিক্ষার্থী মেয়রের মনোযোগ আর্কষণ করেন।

এ সময় নাছির উদ্দিন বলেন, ‘প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী এমন বাস প্রচলন করলেও এর তেমন কোনো সাড়া পড়েনি। পরে এটি বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের নৈতিক দায়িত্ব, মূল্যবোধ মহিলা সিট ছেড়ে দেওয়া। কিন্তু আমরা করছি না। আমি বাস পরিবহন মালিকদের অনুরোধ করব স্কুল চলাকালীন মেয়েদের জন্য আরও অধিক সিটের ব্যবস্থা রাখার জন্য। সেই সাথে আলাদা পরিবহনের বিষয়টিও বিবেচনা করব, মনিটরিং করব।’

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ছড়াকার জিন্নাহ ছড়ার মধ্যে দিয়ে জলাবদ্ধতা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা, যততত্র রাস্তার খোড়াখুঁড়ি নিয়ে সিটি করপোরেশন, সিডিএ, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতা তুলে ধরেন। একইসাথে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ শুরুর বিষয়ে জানতে চান।

এ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘মাস্টার প্ল্যান অনুযাীয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও সিটি করপোরেশনের পরিকল্পনা থাকে। সবার একই সাথে প্রকল্পের অর্থায়ন এবং কাজ শুরু হয়নি। এই কাজগুলো করতে গিয়ে রাস্তার কাজ করতে হয়। নদী দূষণ, খাল ভরাট কমিয়ে আনা সম্ভব হলে জলাবদ্ধতা কমে আসবে। আগামী দু থেকে তিন বছর নগরবাসীকে ধৈর্য ধরতে হবে। এরপর আমরা বাসযোগ্য সবুজ নগরী গড়ে তুলতে পারব।’

স্কুল থেকেই রাজনীতিক দিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন আ জ ম নাছির উদ্দিন। সৎ, বিনয়ী এবং একক সিদ্ধান্তে অটল নাছির কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছাড়াও, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন। এমনকি পদ-পদবী ছাড়াই দীর্ঘদিন আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, নগরীর মুসলিস হাইস্কুলে তিনি রাজনীতিক সচেতনতা লাভ করেন। চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তির পরে জোরেসরে রাজনীতি এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখেন। ৭০ এর পর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিষয়টি তাকে নাড়া দেয়। পরবর্তী সময়ে বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি থেকে বিপুল অর্থ এবং সুযোগ সুবিধা দিয়ে দলে যোগদানের আহ্বান জানায়। এমনকি ১/১১ এর সময় তাকে অনেকবার মেরে ফেলার পরিকল্পনা কথা জানান। মহানগরে আওয়ামী লীগের পদের জন্য ও তদিবির করেননি। প্রধানমন্ত্রী নিজেই পর্যবেক্ষণ করে এবং বিচার করে দায়িত্ব দিয়েছেন।

২০১৫ সালের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব নেন তিনি। দায়িত্বের বিষয়ে তিনি জানান, সব সময় জনগণের জন্য রাজনীতি করেছেন। কখনো মেয়র হবেন এমন পরিকল্পনা করেননি। প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়ে মনোনয়ন দিয়েছেন। মেয়র বলেন, ‘দায়িত্ব পাওয়ার পর সবুজ ও বাসযোগ্য নগরীর শপথ নিয়েছি। ২০১৯ সালের মধ্যে সুবজ ও গ্রিন সিটি নগরবাসীকে উপহার দিতে পারব। এ লক্ষ্যে সকলের সহায়তা, পরামর্শ, এবং সম্পৃক্তা চাই।’

অনুষ্ঠানের শেষের দিকে তরুণদের রাজনীতি বিমুখতা নিয়ে কথা বলেন মেয়র। এটিকে নেতৃত্ব সংকট বলেও দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘অনেক তরুণ ফেসবুকে আই হেইট পলিটিক্স লিখেন, গাল মন্দ করেন। আমি তাদের দোষ দিব না, এর দায়ভার আমাদের। আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি না করে, নিজেদের লাভের জন্য রাজনীতি করলে এর সুফল জনগণ পাবে না। প্রতিটি নাগরিককে রাজনৈতিক সচেতন হতে হবে, রাজনীতির বাহিরে কেউ নয়। বরং সৎ, একাগ্র এবং মানুষের কল্যাণে রাজনীতিতে ব্রত হওয়া উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাফল্যের জন্য পদ-পদবীর প্রয়োজন নেই, নিজের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করলে স্বপ্ন বাস্তবে প্রতিফলন ঘটবে।’

আরও পড়ুন

ট্রেনের বগি নিয়ে চবি ছাত্রলীগের রাজনীতি, বিব্রত মেয়র

এ সম্পর্কিত আরও খবর